নদী সাঁতরে তীরে এসে বুক চাপড়িয়ে কাঁদছিলেন সহকারী অধ্যাপক আবু তাহের সরকার। বিলাপ করছিলেন, প্রিয় সহধর্মিণীর হাত ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু নদীর স্রোত আর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে খুব বেশি সময় হাত ধরে রাখতে পারেননি। নিজে নদী সাঁতরে তীরে আসতে পারলেও সেখানে হারিয়ে গেছে তার স্ত্রী উম্মে খায়রুন ফাতেমা।
সোনারগাঁ কাজী ফজলুল হক উইমেন্স কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক আবু তাহের। তার স্ত্রী উম্মে খায়রুন ফাতেমা উপজেলার হাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
আরো পড়ুন: ১৫ ঘণ্টা পর লঞ্চ উদ্ধার, মরদেহের খোঁজে অভিযান অব্যাহত
লঞ্চডুবির সংবাদ পেয়ে শীতলক্ষ্যার পাড়ে ছুটে এসেছেন আবু তাহেরের সহকর্মীরা। তাদের মধ্যে একজন মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আবু তাহের ও তার স্ত্রী ডুবে যাওয়া লঞ্চটির মাথার সামনে ছিলেন। জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি কাত হয়ে গেলে এই শিক্ষক দম্পতি লঞ্চ থেকে নদীতে পড়ে যান।’
আরেক সহকর্মী মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘তারা নদীতে পড়ে যাওয়ার পর একে অপরের হাত ধরেছিলেন। কিন্তু নদীর স্রোতের কারণে খুব বেশি সময় একসঙ্গে থাকতে পারেননি। আবু তাহের নদী সাঁতরে তীরে আসতে পারলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছে তার স্ত্রী।’
আরো পড়ুন: শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি
রোববার দুপুরে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ‘এমএল আফসার উদ্দিন’ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে নৌ পুলিশ। নিহতদের মধ্যে দুজন নারী, দুজন শিশু ও তিনজন পুরুষ। তাদের মধ্যে ছয়জনকে নদী থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। একজনকে হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টা পর সোমবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ ডুবে যাওয়া লঞ্চটিকে উদ্ধার করে পাড়ে আনে। তবে লঞ্চের ভেতর কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। নিখোঁজদের উদ্ধারে তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আরো পড়ুন: শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক তানহারুল ইসলাম জানান, রাত ১০টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ঘটনাস্থলে আসে। রাতভর চেষ্টার পর ভোর সোয়া ৫টার দিকে আলামিন নগর এলাকায় শীতলক্ষ্যা পাড়ে আনা হয় লঞ্চটিকে। পরে উদ্ধারকারী সংস্থাগুলো লঞ্চটিতে তল্লাশি চালায়। তবে কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, নদীতে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের উদ্ধারে নদীর তলদেশে ও নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তল্লাশি করা হবে।
আরো পড়ুন: বেঁচে ফিরলেন মুন্সীগঞ্জের আব্দুর রব, নিখোঁজ ছেলের বউ ও নাতি
লঞ্চডুবির এ ঘটনায় তদন্ত করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিসের উদ্যোগে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মন্তব্য