-->

কমছে বনভূমি, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ

আমীর হামজা, হবিগঞ্জ
কমছে বনভূমি, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ
হবিগঞ্জের সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে তৈরি করা হচ্ছে ঘরবাড়ি

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশে মোট ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা আবশ্যক। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি হিসেবে বনভূমি রয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, বনভূমি রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো উদাসীন। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বনভূমির সঠিক তথ্য নিয়েও করছে লুকোচুরি। সেই সঙ্গে দখল হওয়া বনভূমি উদ্ধারেও কোনো মাথাব্যথা নেই প্রশাসনের। যে কারণে কমছে বনভূমি, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ।

আজ ২১ মার্চ, আন্তর্জাতিক বন দিবস। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১২ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

একসময় বনভূমিতে ভরপুর জেলাগুলোর মধ্যে বর্তমানে একেবারে তলানিতে রয়েছে হবিগঞ্জ। এ জেলায় সরকারি হিসেবে মোট আয়তনের মাত্র ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। আর বেসরকারি হিসেবে বনভূমির পরিমাণ আরো কম।

হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় বনভূমির পরিমাণ ১১ হাজার ৬৪৪ হেক্টর। যা মোট আয়তনের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

অবাধে উজাড় হচ্ছে হবিগঞ্জের সংরক্ষিত বনভূমি

তবে বন বিভাগ বলছে, জেলায় কি পরিমাণ বনভূমি রয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। সারাদেশে বনের ওপর জরিপ করা হলেও অর্থ বাঁচাতে ও দক্ষ জনবলের অভাবে জেলাভিত্তিক কোনো জরিপ হয়নি।

বন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, হবিগঞ্জ জেলায় এ পর্যন্ত ৮৩ দশমিক ৬৮ একর সংরক্ষিত বনভূমি দখল হয়েছে। এর মধ্যে ২২ জন ব্যক্তির কাছে স্থায়ী স্থাপনাবিহীন বনভূমি রয়েছে ৪৬ দশমিক ৭২ একর। যেখানে তৈরি হয়েছে বাগান ও কৃষিজমি।

৪ দশমিক ৪৮ একর ভূমিতে স্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছেন ৫২ জন। ৪টি শিল্প কারখানায় দখল করেছে ৩২ দশমিক ৩২ একর। এছাড়া অন্যান্যভাবে দখলে রয়েছে দশমিক ১৬ একর সংরক্ষিত বনভূমি।

বন অধিদপ্তর বলছে, ৮৩ দশমিক ৬৮ একর সংরক্ষিত বনভূমি উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন সেই প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করেনি।

স্থানীয়ভাবে ৭ দশমিক ৫২ একর বনভূমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হলেও বাকিগুলো উদ্ধারে কোনো অগ্রগতি নেই। এছাড়া মামলা হয়নি একজন দখলদারের বিরুদ্ধেও।

অন্যদিকে, তাদের হিসেবে অসংরক্ষিত বনভূমি দখল হয়েছে মাত্র দশমিক ৩১ একর। আর দখলদারের সংখ্যা মাত্র ২ জন। এ ব্যাপারে দেওয়ানি মামলা চলমান রয়েছে।

পরিবেশবাদীদের দাবি, সরকারের এই তথ্যটি হাস্যকর। দেশের যে কয়টি জেলাতে বনভূমি ছিল এর মধ্যে অন্যতম হবিগঞ্জ জেলা। অথচ বন অধিদপ্তর বলছে, বনভূমি দখল হয়েছে মাত্র ৮৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন দেখতাম চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবলে শুধুই বনভূমি। অথচ এখন বনভূমির এখন দেখাই মিলে না। সবগুলো দখল হয়ে গেছে। অথচ সরকারি হিসেবে দখল হয়েছে মাত্র ৮৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। শুধু আমি না, যে কেউ বলবে এই তথ্য হাস্যকর ছাড়া আর কিছু নয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে, দখল হচ্ছে। অথচ সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বনভূমি শুধু জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের আধারই নয়, সুপেয় পানি ধরে রাখে বৃক্ষ। ফলে কোনো এলাকায় বনভূমি কমে গেলে সেখানে মরুকরণ, ভূমিধস ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় বেড়ে যায়। বনভূমি ধ্বংসের কারণে যে কি পরিমাণ বিপর্যয় নেমে আসবে সেটা হয়ত কয়েক বছর পরই টের পাওয়া যাবে।’

হবিগঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘হবিগঞ্জে বনভূমির পরিমাণ কত, সেই হিসেব আমাদের কাছে নেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি, বনভূমিকে রক্ষা করতে। এ ব্যাপারে সংরক্ষিত বনভূমিকে দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসনের কাছে একটি উচ্ছেদ প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এখন জেলা প্রশাসনই বলতে পারবে এ ব্যাপারে তারা কি প্রদক্ষেপ নিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করতে পারেন, বাহুবলে যে পাহাড় কাটা হয়েছে সেগুলো আমাদের বনের অংশ। কিন্তু আসলে তা নয়, এটি রাবার কর্পোরেশনের জায়গা।’

জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিজেন ব্যানার্জি বলেন, ‘আমি নতুন এখানে এসেছি। যদি বন বিভাগ কোনো প্রস্তাবনা পাঠিয়ে থাকে তাহলে আমার সেটা জানা নেই। আর বনের জায়গা অবৈধ দখল উচ্ছেদের কাজ আমাদের নয়। এটি বনবিভাগ করবে। যদি আমাদের সহযোগিতা লাগে আমরা বন বিভাগকে সহযোগিতা করব।’

 

মন্তব্য

Beta version