-->
শিরোনাম

এক বালতি পানির জন্য দেড় কিলোমিটার পাড়ি

বিজন কুমার দাস, দিনাজপুর প্রতিনিধি
এক বালতি পানির জন্য দেড় কিলোমিটার পাড়ি
পানি সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন বাগানপাড়ার বাসিন্দারা

দিনাজপুরের চিরিবন্দর উপজেলার ৭নং আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম মাঝিনা। গ্রামটির ঠিক দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বাগানপাড়া নামে একটি আদিবাসী পল্লি রয়েছে। ৩৬টি বাড়ি নিয়ে এখানে প্রায় ১৫০ লোকের বসবাস।

তবে প্রতি বছরই বাগানপাড়াপল্লিতে বোরো মৌসুম অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়। তখন এখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দা সকাল এবং সন্ধ্যায় হেঁটে প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এক বালতি পানি সংগ্রহ করেন।

ভোরের আকাশের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানান বাগানপাড়াপল্লির বাসিন্দা লিমা মুর্মু।

তিনি বলেন, ‘খরা মৌসুমে যখন চারদিকে ইরি ধান চাষাবাদ শুরু হয়, তখন আমাদের এখানকার টিউবওয়েলগুলো থেকে তেমন পানি ওঠে না। তাই প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে পানি সংগ্রহ করতে হয়। এতে অনেক কষ্ট হয়।’তিনি আরো বলেন, ‘সরকার আমাদের যে টিউবওয়েল (তারাপাম) দিয়েছে, তাতে পানি তুলতে প্রায় ৪ থেকে ৫ মিনিট চাপতে হয়। তার পরও তেমন পানি ওঠে না।’

একই এলাকার গৃহিণী মিনতি মুর্মু বলেন, ‘চৈত্র মাসে যখন চারদিকে ইরি ধানের আবাদ হয়, তখন আমাদের পানির কষ্ট বেড়ে যায়। চারদিকে গভীর নলকূপ চলে, তাই আমরা বাড়ির টিউবওয়েলে পানি পাই না।’

বিউটি মুর্মু বলেন, ‘পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া তো আর বাঁচা সম্ভব নয়। আমাদের এখানে পানির খুব কষ্ট। সরকার থেকে একটা টিউবওয়েল দিছে, তাতে পানি উঠতে চায় না।’

মাঝিনা এলাকার শুশান্ত দাস বলেন, ‘যতদিন আমাদের আশপাশে ডিপ চলবে, ততদিন বাড়িতে আর পানি পাব না। মানে টিউবওয়েলে পানি উঠবে না। আমার বাড়িতে সাবমার্সেল বসানোর কারণে কিছু পানি পাচ্ছি। যাদের বাড়িতে সাবমার্সেল বসানো নেই, তারা প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করেন।’

ডিপ মেশিনের সামনে পানির জন্য অপেক্ষা করছেন কয়েকজন নারী

শুধু মাঝিনা বাগানপাড়াই নয়, খরা মৌসুমে একই ইউনিয়নের ইন্দ্রপাড়াসহ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়। এতে স্থানীয়রা যেমন নিত্যব্যবহার্য পানির অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, পাশাপাশি কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না।

কৃষকরা বলছেন, পানির অভাবে ফসলের উৎপাদন কমেছে। একই সঙ্গে ফসল উৎপাদনে বাড়ছে খরচ।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এএন নাইমূল এহসান জানান, খরা মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্থিতিতল ২৫ ফুটের নিচে নেমে গেলে টিউবওয়েলে আর পানি তোলা সম্ভব নয়। প্রতি বছরই স্থানভেদে পানির এই স্থিতিতল গড়ে প্রায় এক মিটার করে নেমে যাচ্ছে। দিনাজপুর জেলার ১০৩টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৫০টি ইউনিয়নে খরা মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্থিতিতল নেমে যায়। এতে পানির সমস্যা দেখা দেয়।

তিনি আরো জানান, পানির সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালে দিনাজপুরে ১০৩টি ইউনিয়নে ৩ হাজার ১৫০টি টিউবওয়েল (তারাপাম্প) বসায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। একইভাবে ২০২১ সালে বসানো হয় ২ হাজার ৬৭৮টি। পর্যায়ক্রমে আরো টিউবওয়েল বসানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

মন্তব্য

Beta version