কৃষিপ্রধান অঞ্চল বগুড়া। কৃষিকাজসহ অন্যান্য কাজে ব্যাপক হারে পানি ব্যবহারের ফলে জেলাটির ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। গত ১৩ বছরে বগুড়ার পানির স্তর ৩ দশমিক ৩৪ ফুট নিচে নেমেছে বলে এক গবেষণায় দেখা গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন, প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব ও ব্যাপক হারে মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলন করায় পানির স্তর নিচে নামছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে জেলাটিতে খুব দ্রুত বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটের শঙ্কাও করছেন তারা।
বগুড়ার বেশিরভাগ এলাকায় নদী-নালা ও খাল-বিলের পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চল ও সেচপ্রধান এলাকাগুলোতে প্রতিবছর নলকূপের পাইপ বৃদ্ধি করতে হচ্ছে।
বরেন্দ অঞ্চলটিতে ১৫০ ফুটের নিচে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এর মধ্যেই অকেজো হয়ে পড়েছে বেশিরভাগ হস্তচালিত নলকূপ। আর গভীর নলকূপগুলোতেও ঠিকমতো উঠছে না পানি।
বগুড়ার আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, নন্দীগ্রাম, শেরপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় সাধারণত ৫০-৭০ ফুটে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যেত। কিন্তু গত কয়েক বছরে পানির স্তর নেমেছে এলাকাভেদে গড়ে ১০-১৫ ফুট পর্যন্ত।
সেচ ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীরা জানান, চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে তীব্র খরতাপে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দেবে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কল্যাণী গ্রামে হস্তচালিত অনেক নলকূপে ইতোমধ্যে পানি উঠছে না। তবে বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে পানি তোলা হচ্ছে। কিন্তু নতুন নলকূপ স্থাপনের ক্ষেত্রে পাইপ ব্যবহার করা হচ্ছে ৮০-৯০ ফুট পর্যন্ত। বগুড়ার আদমদীঘিতে পানি উত্তোলনে ১২০ ফুট পর্যন্ত নলকূপে পাইপ ব্যবহার করা হচ্ছে।
উপজেলার কেশরতা গ্রামের মো. হেদায়েতুল ইসলাম উজ্জল বলেন, ‘টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য ৮০-১০০ ফুট আর সেচ কাজের জন্য ১২০ ফুট পর্যন্ত পাইপ দিতে হচ্ছে। অন্যথায় সহজে পানি উত্তোলন করা যায় না।’
এক যুগ আগে ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিনের সাহায্যে সেচ দেয়া হতো কৃষি জমিতে। আর নলকূপ বলতে ৫০ ফুট পাইপ বসিয়ে পুরোদমে পানি উত্তোলন করা হতো এ অঞ্চলে। কিন্তু এখন প্রযুক্তির কল্যাণে বিদ্যুৎচালিত মেশিন দিয়ে পানি তোলা হচ্ছে। এসব তথ্য দেন নন্দীগ্রামের বুড়ইল ইউনিয়নের মো. আব্দুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘ভূ-গর্ভের পানি ব্যবহারে প্রতিবছর পানির স্তর নিচে নামছে। স্থায়ী জলাশয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন খাল-বিলের পানি ব্যবহার না বাড়ালে আগামীতে বিশুদ্ধ পানির বড় সংকট দেখা দিবে।’
বগুড়ার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেনন, ‘বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবছর গড়ে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত পানির স্তর নিচে নামছে।’
পানির ব্যবহারের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গৃহস্থালি কাজে ৮ ভাগ, শিল্পকারখানায় ২২ ভাগ, কৃষিতে প্রায় ৭০ ভাগ পানি ব্যবহার করা হয়। উপরিভাগের পানি সরবরাহ বাড়ানো না গেলে ভবিষ্যতে পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হবে।’
ইতোমধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার ও মহাস্থানগড় এলাকায় পানি উত্তোলনে ১৮০ ফুট পর্যন্ত পাইপ ব্যবহার করতে হচ্ছে বলেও জানান এ সরকারি কর্মকর্তা।
বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (আরডিএ) তথ্য মতে, সারা বছর ফসল উৎপাদনের জন্য মোট ব্যবহৃত পানির ৯৭ ভাগ সেচ কাজে ব্যবহার হয়। ভূ-গর্ভস্থ পানির তুলনায় উপরিভাগের পানি সেচের জন্য অধিক উপযোগী হলেও শুষ্ক মৌসুমে ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা পর্যাপ্ত না থাকায় দেশের ৭৮ ভাগ পানি গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে মাটির নিচ থেকে তোলা হয়।’
আরডিএ’র উপপরিচালক আবিদ হোসেন মৃথা জানান, ‘গত ১৩ বছরে বগুড়ায় পানির স্তর নিচে নেমেছে ৩ দশমিক ৩৪ ফুট।’
মন্তব্য