-->
শিরোনাম
* শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর * ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা

পানির অভাবে ‘ব্যাহত’ হবে ধান উৎপাদন

বিজন কুমার দাস, দিনাজপুর
পানির অভাবে ‘ব্যাহত’ হবে ধান উৎপাদন
১০ থেকে ১৫ ফুট মাটি খনন করে তার মধ্যে স্যালোমেশিন বসানো হয়েছে। ছবি- ভোরের আকাশ

শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত দিনাজপুর। বর্তমানে এই জেলায় বোরো আবাদ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আর ফসল আবাদে এই জেলার কৃষকরা সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল ভূগর্ভস্থ পানির ওপর। কিন্তু দিন দিন নিচে নামছে ভূগর্ভস্থ’ পানির স্তর। এতে বিপাকে পড়েছেন এই জেলার কৃষকরা।

কৃষকরা বলছেন, পর্যাপ্ত সেচ দিতে না পারলে ধানের ফলন আশানুরূপ পাওয়া সম্ভব নয়। যদিও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ভূগর্ভস্থপানির স্তর ২৫ ফুট নেমে গেলে টিউবওয়েলের মাধ্যমে পানি উঠানো সম্ভব নয়। তবে প্রযুক্তি পরিবর্তন করলে পানি উঠানো সম্ভব।

এর প্রতি উত্তরে কৃষকরা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ঠিকমতো সেচের খরচই দিতে পারি না। সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের খরচ রয়েছে। আমরা কীভাবে নিত্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করব? আর এর মাধ্যমে খরচ বেড়ে যায় বহু গুণ। এছাড়া ধান উৎপাদন কম হলে সারা বছরেও সেই লোকসান পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব না।’

দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলায় সরেজমিনে দেখা যায়, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমে গেছে। এ কারণে ১০ থেকে ১৫ ফুট মাটি খনন করে তার মধ্যে মোটর, স্যালোমেশিন বসানো হয়েছে। এরপরেও পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না কৃষকরা। শুধু চিরিবন্দর উপজেলাতেই নয়, সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নেও একই অবস্থা দেখা গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য মতে, দিনাজপুর জেলায় এ বছর ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষকরা জানান, পানি কিংবা কাদার মধ্যে ধানের চারা রোপণ করতে হয়। আর এই সময় পানির প্রয়োজন নেই। চারা রোপণের ১০ দিন পর থেকে ধানের গাছে ফুল আসা পর্যন্ত বার বার এক ইঞ্চি সমপরিমাণ সেচ দিতে হবে। এরপর ধানের দানা তৈরির সময় সেচ দিতে হবে চার থেকে পাঁচ ইঞ্চি সমপরিমাণ। ধানের দানা পরিপূর্ণ হলে পর্যাক্রমে সেচ কমাতে হবে।

দিনাজপুরের চিরিবন্দর উপজেলার ৭নং আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের মাঝিনা গ্রামের কৃষক জয়নাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে গভীর নলকূপেও ভালো মতো পানি উঠে না। এ কারণে জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দিতে পারি না। আর জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দিতে না পারলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব না। এ কারণে ফলন নিয়ে শঙ্কায় আছি।’

সদর উপজেলার দিঘন এলাকার কৃষক রুবেল ইসলাম বলেন, ‘এখন ক্ষেতে পর্যাপ্ত সেচ প্রয়োজন। কিন্তু জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দিতে পারছি না। এতে ফলন কম হবে।’ একই এলাকার কৃষক শ্যামল রায় বলেন, ‘এবার সেচের অভাবে ধানের ফলন ভালো হবে না।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা এস এম আবুবকর সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পানির সংকট রয়েছে। তবে কৃষকরা সেচের ব্যাপারে সচেতন নন। আমরা যদিও এই সেচের ব্যাপারে বরাবরই সচেতন করে আসছি। সেচের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। তা কৃষকরা মানতে চান না। কৃষকরা সাধারণত মনে করেন আমি টাকা দিয়ে জমিতে পানি নেব, কম নেব কেন? তাই সঠিক নিয়মে সেচ দিতে হবে। তাহলে ভালো ফলন পেতে সমস্যা হবে না।’

মন্তব্য

Beta version