পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িকে বলা হয় ‘বাংলার সুন্দরী কন্যা’। ছয় লাখেরও বেশি মানুষের পাহাড়িয়া এ জনপদে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২২৭ জনের বসতি। খাগড়াছড়িতে শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ ঝিরি ও ঝর্ণা শুকিয়ে পাহাড়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট বেড়েছে বহুগুণ। ফাগুন থেকে জ্যেষ্ঠ মাস পর্যন্ত তীব্র খরায় খাবার পানির সংকটে ভুগে স্থানীয়রা। পাহাড়ি অরণ্যে ঢাকা গ্রামগুলোর মানুষের এখন চিন্তা একটাই ‘পানি আর পানি।’ কারণ আগের মতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও।
এখানকার চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সাঁওতাল ও বাঙালির সম্মিলন হলেও পাহাড়ে বছরে প্রায় ছয় মাস ঝিরি-ঝর্ণা বা কুয়াতেও পানি মিলে না। জেলার ৩৮টি ইউনিয়নের অধিকাংশ পাহাড়ি গ্রামের একই অবস্থা। পানির উৎসগুলো অনেকটা মৃত। সারাদিন জুমচাষে ব্যস্ত থাকা জুমিয়ারা এখন দিনের অর্ধেক সময় ব্যয় করছে পানি সংগ্রহের কাজে।
তবে খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের পাশাপাশি সম্প্রতি সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা সদর উপজেলার ৬নং ইউনিয়িনের সাপমারা গ্রামের সিন্দু বালা ত্রিপুরা (৪৫)। রোজ সকাল ও বিকেল দুই বেলা ১৫-২০ মিনিট হেঁটে খাবার ও রান্নার কাজে ব্যবহৃত পানি সংগ্রহ করে থাকেন পাহাড়ের নিচে কুয়া থেকে। এছাড়া দুপুরে গোসল ও থালাবাসন ধোয়ার জন্যও যেতে হয় ওই কূপে।
পাশের বেঙমারা গ্রামের কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী দিনবালা ত্রিপুরা (১৮)। তিনি কলেজে যাওয়ার আগে ২০-২৫ মিনিট হেঁটে বাড়িতে ব্যবহারের জন্য পাহাড়ি কূপ থেকে রোজ পানি সংগ্রহ করে থাকেন।
একইভাবে তবলছড়ি ইউনিয়ন, দীঘিনালার নয়মাইল, সীমানাপাড়া আর পানছড়ির হেলাধুলাপাড়াসহ অনেক গ্রামে পানির অভাবে দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. আইয়ুব আলী আনসারি বলেন, ‘এ সংকট উত্তরণে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পানির স্তর (লেয়ার) গভীর ও পাথুরে পাহাড় হওয়ায় নলকূপ স্থাপন করেও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ওইসব স্থান চিহ্নিত করে সুপেয় পানির জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ঝর্ণার পানি ব্যবহারের জন্য একটি নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
অবশ্য কৃষি গবেষকরা জানিয়েছেন, মূলত প্রাকৃতিক বনাঞ্চল নষ্ট করে ফেলা, নির্বিচারে গাছ কাটা ও পাহাড়ে আগুন দেওয়ায় দিনে দিনে পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। তাই এখনই সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন।
সংকটাপন্ন এলাকায় জরুরিভিত্তিতে পানির ব্যবস্থা করা এবং ভবিষ্যতে পানির দষ্প্রাপ্যতা দূরীকরণে এখনই কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণের প্রয়োজন বলে মনে করেন গবেষকরা।
মন্তব্য