সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র জাফলং। স্বচ্ছ পানির দেশ হিসেবে এর পরিচিতি দেশব্যাপী। অথচ এই পর্যটন কেন্দ্রতেই রয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটক জাফলংয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, দল বেঁধে পর্যটক এসেছে জাফলংয়ে, সেখানেই রান্না ও খাবারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে নদী ও কূপের পানি। বছরের পর বছর এমনটিই চলছে। শত শত ভ্রমণবিলাসী নদী ও কূপের পানি পান করে পেটের পীড়াজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্রে সপরিবারে রাজশাহী থেকে বেড়াতে আসা রুহুল আমিন বলেন, গোটা দেশে যেখানে উন্নয়নের জোয়ার বইছে, ঠিক তখনই দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ে আগত পর্যটকরা বছরের পর বছর বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে ভুগবে, এটি কেমন কথা। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত এ সমস্যার সমাধানের দাবি জানাই।
কুমিল্লা থেকে ঘুরতে আসা কলেজশিক্ষার্থী এহসানুল কবির জানান, এখানে কোনো নলকূপ নেই। তাই বাধ্য হয়ে জিরো পয়েন্ট থেকে অনেক দূরে গিয়ে পানি কিনতে হয় তাদের, তাও চড়া দামে। এ সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের প্রয়োজন।
বৃহত্তর জাফলং সংগ্রাম পর্যটন কেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ওমর সানি বলেন, ‘জাফলংয়ের বিজিবি ক্যাম্প এলাকার পর্যটন কেন্দ্রটি পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে প্রতিনিয়তই বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়।’
জাফলংয়ে আগত পর্যটক ও স্থানীয় পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট সমস্যা সমাধানে এই এলাকায় গভীর নলকূপ ও ট্যাংক স্থাপনের মাধ্যমে পানির চাহিদা পূরণের দাবি জানান তিনি।
পর্যটকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন শঙ্খচিল-এর সভাপতি আবিদ কাওসার জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বারবার এই সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও কার্যত কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আগত পর্যটকদের খাবার পানির সমস্যা সমাধানে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইউনুছ আলী বলেন, ‘পাথরের এলাকা হওয়ায় এখানে কোনো অগভীর বা গভীর নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হয় না। শুধু রিংওয়েল স্থাপন করা যায়, যা দিয়ে পুরো পর্যটন এলাকা কাভারেজ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা অনেক কঠিন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ সম্প্রতি কথা হচ্ছে, ডাউকি নদী থেকে আসা পানিকে ট্রিটমেন্ট করে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা। সেক্ষেত্রে জায়গাসংক্রান্ত বিষয় জটিলতা আছে।’
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘বিশুদ্ধ খাবার পানির সমস্যা সমাধানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ে বিশুদ্ধ খাবার পানির সমস্যা সমাধান হবে।’
মন্তব্য