সিলেট মহানগরে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের বসবাস। অথচ এখনো এক-তৃতীয়াংশ বাসাবাড়ি পানিসেবা আওতার বাইরে। এতে ভোগান্তি আর হুমকির মুখে পড়েছে জীবন-জীবিকা। এ অবস্থায় পানি সমস্যা সমাধানে দ্রুত সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আজ ২২ মার্চ ‘বিশ্ব পানি দিবস’। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব পানি দিবস ২০২২’ পালনে সিলেটেও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্র বলছে, নগরে প্রায় ৫৪ হাজার হোল্ডিং রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ১৬ হাজার ৫০০ পানির গ্রাহক। এই সাড়ে ১৬ হাজার গ্রাহককেও নিয়মিত পানি সরবরাহ করতে পারছে না সিটি করপোরেশন।
সূত্র আরো জানায়, নগরীতে অনুমোদিত গভীর ও অগভীর নলকূপের সংখ্যা মাত্র ২৮শ। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় মাত্র এক-তৃতীয়াংশ পানি সরবরাহ করছে সিটি করপোরেশন। নগরীর প্রায় পাঁচ লাখ জনসাধারণের প্রয়োজন মেটাতে প্রতিদিন প্রায় আট কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। তার বিপরীতে আড়াই থেকে তিন কোটি লিটার সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
এতে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ কোটি লিটার পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। চাহিদার তুলনায় কম পানি উৎপাদন হওয়ায় প্রায় দেখা দেয় সংকট।
এদিকে প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ লিটার পানি উৎপাদন করা তোপখানার শতবর্ষী পাম্পটি প্রায় অকেজো হয়ে গেছে। এটির উৎপাদন সক্ষমতা কমে গিয়ে বর্তমানে মাত্র ৬ লাখ লিটারে ঠেকেছে। পাম্পটি সংস্কারের অনুপযোগী, এটাকে আধুনিকায়ন করতে হবে বলে জানিয়েছেন সিসিকের পানি শাখা।
নগরীর ছড়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা সেলিম জানান, সারাদিন কাজ করে এসে রাত ১টা পর্যন্ত জেগে থাকতে হয় সাপ্লাইয়ের পানির অপেক্ষায়। আশপাশের অনেকে লাইনের সঙ্গে মোটরলাইন সংযোগ দিয়ে পানি তোলেন তারা।
তিনি আরো জানান, গভীর রাতে যখন একবারের জন্য পানি আসে তখন মোটর দিয়ে পানি টেনে নেন তিনি। এতে আশপাশের লাইনগুলোতে পানির বেগ কমে যায়। যদিও পানির লাইনে সরাসরি মোটর সংযোগ দেওয়া বেআইনি। কিন্তু তা দেখবে কে? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
নগরীর তালতলার বাসিন্দা মো. হাসান মিয়া জানান, তারা ছয় ভাই একই বাড়িতে থাকেন। সাপ্লাই পানি সরবরাহ করে তা দিয়ে তাদের এক ফ্যামিলিরই হয় না। দীর্ঘদিন পানি সমস্যা ভোগ করায় তারা ২০ বছর আগে গভীর নলকূপ স্থাপন করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ভোরের আকাশকে বলেন, ‘সিলেট সিটিতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপশি মৌলিক চাহিদা পানির দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে দিন দিন পানির লেভেল নিচে নেমে যাচ্ছে। বিকল্প হিসেবে সিটি করপোরেশনকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পরিমাণ বাড়াতে হবে।’
‘এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে নদী খনন করে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। এভাবে যদি ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হয় তা হলে আমাদের জন্য বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।’
সিটি করপোরেশনের পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, ‘বেশিরভাগ হোল্ডিং আগে যৌথ ছিল। তাই এক নামে একাধিক পরিবার পানি ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া কিছু অবৈধ সংযোগ ও নলকূপ রয়েছে। গত ২০১৬ সাল থেকে সিসিক বাসাবাড়ির প্ল্যানিং ম্যাপ অনুমোদন দেওয়ার সময় পানির উৎসের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে টিউবওয়েলের পারমিশন দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অবৈধ পানির সংযোগের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
মন্তব্য