-->
শিরোনাম

প্লাস্টিকের কুঁচি রক্ষা করছে পরিবেশ

শরিফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি
প্লাস্টিকের কুঁচি রক্ষা করছে পরিবেশ
রোদে শুকানো হচ্ছে প্লাস্টিকের কুঁচি

দিনে দিনে মানবজীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে প্লাস্টিক। কিন্তু এর অপব্যবহারে প্রতিনিয়ত সমুদ্র, নদীনালা, খাল-বিল, পুকুর, প্রকৃতি দূষিত হচ্ছে। তবে বর্তমানে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মেশিনে ভেঙে তৈরি হচ্ছে কুঁচি। আর এসব কুঁচি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিদেশেও রপ্তানি করে আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা।

মূলত স্থানীয় ডিলারদের মাধ্যমে এসব কুঁচি ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। যশোরের বেনাপোল হয়ে ভারতে এবং চট্টগ্রাম থেকে শিপের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে এসব কুঁচি রপ্তানি করেন ডিলাররা।

পরিবেশবাদীদের দাবি, যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লাস্টিক পণ্য সংগ্রহের পর প্রক্রিয়াজাত করায় পরিবেশ দূষণ কমছে। পাশাপাশি এসব কুঁচি তৈরির কারখানায় হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নীলফামারী জেলায় প্রায় দুই শতাধিক ছোট-বড় প্লাস্টিকের কুঁচি তৈরির কারখানা রয়েছে। আর এসব কারখানায় প্লাস্টিকের পুরনো বোতল, স্যালাইনের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের কভার, সিরিঞ্জসহ বিভিন্ন প্লাস্টিকের পণ্য মেশিনে ভেঙে তৈরি করা হয় কুঁচি। এসব কুঁচি এখান থেকে সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন বড় বড় প্লাস্টিকের কারখানায়। বিদেশেও রপ্তানি করে আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। প্রতিটি কারখানায় প্রতিদিন ৪০-৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন।

সরেজমিনে জেলার কয়েকটি প্লাস্টিক কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, একদিকে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের পণ্য স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে তা মেশিনে ভাঙা হচ্ছে। অন্যদিকে প্লাস্টিক কুঁচি শুকাতে ব্যস্ত শ্রমিকরা।

ডোমার উপজেলার পাঙ্গা মটুকপুরের রায় ট্রেডার্সের কারখানায় কাজ করার সময় কথা হয় নারী শ্রমিক কবিতা রানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে সারাদিন বিভিন্ন প্লাস্টিকের পণ্য বাছাই করে ভাগ করে রাখি। আর এখান থেকে নিয়ে গিয়ে মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় কুঁচি। সারাদিন কাজ করে মজুরি পাই ১৫০ টাকা। বর্তমানে এ কাজ করে সংসারে অভাব নেই বললেই চলে।’

ওই কারখানার মেশিন অপারেটর তপন রায় জানান, শ্রমিকরা প্রথমে প্লাস্টিকের পণ্যগুলো ভাগ করে রাখেন। পরে তা মেশিনে দিয়ে কুঁচি করা হয়। এরপর এসব কুঁচি ওয়াশ মেশিনে পরিষ্কারের পর রোদে শুকানো হয়। রোদে শুকানোর পর বিক্রির জন্য বস্তায় ভরে প্যাকেটজাত করা হয়।

ডোমারের পাঙ্গা মটুকপুরের রায় ট্রেডার্সের কারখানায় রোদে শুকানো হচ্ছে প্লাস্টিকের কুঁচি

রায় ট্রেডার্সের মালিক কমল রায় জানান, কুঁচির বিভিন্ন নাম রয়েছে। যেমন কোমলপানীয়ের বোতলগুলোর নাম পেট। আর এসব বোতলের কুঁচি বিদেশে যায়। দেশেও বিক্রি হয়ে থাকে। এই পেট দিয়ে দামি সুতা তৈরি হয়। মোটা প্লাস্টিক থেকে তৈরি হয় মিক্সারি। হালকা প্লাস্টিকের পণ্য দিয়ে তৈরি হয় চুড়ি রাখার পানিহাট। হাইব্রজ দিয়ে তৈরি হয় বদনা আর পিপি দিয়ে তৈরি হয় প্লাস্টিকের দড়ি।

তিনি জানান, ইউটিউব দেখে তিনি এই কারখানা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্লাস্টিকের কুঁচি তৈরির মেশিনের দাম খুব বেশি না। স্থানীয় ডিলারদের কাছে কুঁচি বিক্রি করে মাসে সোয়া এক লাখ টাকার মতো আয় করেন তিনি। এখন অনেকেই এই কুঁচি তৈরির কারখানার প্রতি ঝুঁকছেন।

সৈয়দপুরের বাঙ্গালীপুরের ইমরান এন্টারপ্রাইজের মালিক ইমরান হোসেন জানান, বিভিন্ন ভাঙাড়ির দোকান থেকে তারা প্লাস্টিকের পুরানো বোতল কেনেন ২০ টাকা কেজি দরে। অন্যান্য প্লাস্টিকসামগ্রী কেনেন ৩৫ টাকা কেজি দরে। এরপর মানভেদে প্রতি কেজি কুঁচি ৬০-১০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। মাসে দুই লাখ টাকার মতো আয় করেন তিনি।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই খাতের আরো বিকাশ সম্ভব বলেও জানান ইমরান হোসেন।

নীলফামারী জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী মুরাদ হোসেন জানান, কুঁচি তৈরির কারণে মানুষজন এখন প্লাস্টিকের অব্যবহৃত পণ্য সংগ্রহ করে। ফলে পরিবেশ দূষিত হয় না।

নীলফামারী জেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল হক জানান, প্লাস্টিক মাটির সব থেকে বড় শত্রু। আর এই প্লাস্টিকের কারণে দিন দিন ফসল কমে যাচ্ছে। তবে যত্রতত্র ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক সংগ্রহ করে কুঁচি তৈরি হওয়ায় তা পরিবেশের বেশ উপকার বয়ে আনবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুরের সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায় জানান, যত্রতত্র পড়ে থাকা প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। আর এই ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে পরিবেশ। পাশাপাশি এসব কারখানায় কাজ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছে।

মন্তব্য

Beta version