-->
শিরোনাম

১৩ বছরে পানির স্তর নেমেছে ৩.৩৪ ফুট

রিপন দাস, বগুড়া প্রতিনিধি
১৩ বছরে পানির স্তর নেমেছে ৩.৩৪ ফুট
প্রতীকী ছবি

পানির অপর নাম জীবন। পানি থাকলেই জীবন থাকবে। পানি ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু বগুড়া জেলায় বিশুদ্ধ বা সুপেয় পানির অভাব ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ যেমন নিত্যব্যবহার্য পানির অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, পাশাপাশি কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না।

নিরাপদ পানির অধিকারবঞ্চিত এই বিপুল জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই আবার চরম দরিদ্র। প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বাস করে গ্রামে।

জানা গেছে, বগুড়ায় ছোট-বড় প্রায় ১৮টি নদী আর ১০টির অধিক খাল ও বিল রয়েছে। এসব জলাধার নাব্য সংকটের কারণে সারাবছর পানি থাকে না। যমুনা, বাঙ্গালী, করতোয়া ও নাগর নদীতে বর্ষা মৌসুমে কয়েক মাস পানিপ্রবাহ থাকলেও হলহলিয়া, ইছামতি, ইরামতি, সুখদহ, মহিষাবান, ডকুরিয়া, বেলাই, ভদ্রাবতি, চন্দ্রবতি, গাংনই, গজারিয়া ও মানস নদীসহ ভেলকা ও বানিয়াইয়ান নদী শুষ্ক থাকে সারাবছর।

তাই পানির বিকল্প উৎস হিসেবে টিউবওয়েল (তারাপাম্প) বসানোর ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে যারা একটু সচ্ছল তারা নিজ উদ্যোগে বাড়িতে টিউবওয়েল বসাচ্ছেন।

তবে এতেও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব পুরোপুরি দূর হচ্ছে না। কারণ শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। মূলত ২৫ ফুটের নিচে নেমে গেলে টিউবওয়েলে আর পানি তোলা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া বগুড়ার সব ক’টি উপজেলায় পানিতে আর্সেনিক রয়েছে বলে অভিযোগ।

ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিয়ে এক গবেষণায় বগুড়া পল্লি উন্নয়ন একাডেমির উপ-পরিচালক আবিদ হোসেন মৃথা বলেন, ‘গত ১৩ বছরে বগুড়ায় পানির স্তর ৩ দশমিক ৩৪ ফুট নিচে নেমে গেছে।’

এ দিকে দীর্ঘ ৪০ বছরের বেশি সময়ে ধরে জমিতে সেচপাম্পের মাধ্যমে পানি দেওয়া ও টিউবওয়েল বসানোর কাজ করেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের আওলাকান্দি গ্রামের গোলাম রহমান। তিনি জানান, কয়েক বছর আগেও ১০ থেকে ১৫ ফুট মাটি গর্ত করে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পানি উত্তোলন করে কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া গেছে। তবে প্রতি বছর ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নামছে। ফলে টিউবওয়েল বসাতে আগের চেয়ে ২০-৩০ ফুট পাইপ বেশি লাগছে।

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ওমরপুর এলাকার সেচপাম্প মালিক জাহিদুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর এ এলাকায় পানি সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে বেশি সমস্যা হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের প্রযুক্তির ফলে ভূগর্ভের পানি ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ। যদিও ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এর সুফল সব সময় পাওয়া যায় না।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নদীসহ খাল ও বিলে পানি ধরে রাখতে না পারলে ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে সব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। নদীগুলো খনন করে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। তবে ইতোমধ্যে এ অঞ্চলে নদী খননের কাজ শুরু হয়েছে।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অধিক হারে ভূগর্ভের পানি উত্তোলন করলে আগামীতে এ সমস্যা আরো তীব্র আকার ধারণ করবে।

মন্তব্য

Beta version