-->
শিরোনাম
ভোরের আকাশের অনুসন্ধান

হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব কেন

শাকিল মুরাদ, শেরপুর
হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব কেন
শেরপুর সীমান্তে বন্যহাতির দল

শেরপুর সীমান্তজুড়ে গারো পাহাড়। এই পাহাড়ে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিত্যদিনের। এ দ্বন্দ্বে গত চার মাসের ব্যবধানে চারটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে এবারই প্রথম জেলায় হাতি হত্যার ঘটনায় মামলা হয়। সেই মামলায় কারাগারেও যায় আসামিরা। কিন্তু কেন এই হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব? এ নিয়ে অনুসন্ধান করেছে দৈনিক ভোরের আকাশ।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিনিয়ত দখল হচ্ছে বনের জমি। তৈরি হচ্ছে বাড়ি ও ফসলের মাঠ। সীমান্তের বিভিন্ন উঁচু টিলা দখল করে বাগান করা হয়েছে। এতে চরম খাদ্যের সংকটে পড়েছে বন্যহাতির দল। পাশাপাশি আবাসস্থলও হারাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই মানুষের বসতবাড়িতে হামলা করছে হাতির দল। নষ্ট করছে গাছপালা ও ফসল। আর এসব প্রতিরোধে স্থানীয়রা বৈদ্যুতিক ফাঁদসহ নানা কায়দায় হত্যা করছে বন্যহাতি।

বন বিভাগের তথ্যমতে, গেল মাসে সর্বশেষ গারো পাহাড়ের গজনী আঠারো ঝোড়া এলাকা থেকে একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে গত চার মাসের ব্যবধানে চারটি মৃত বন্যহাতি উদ্ধার করে বন বিভাগ।

এদিকে হাতি হত্যা নিশ্চিত হওয়ার পর এ বছর জেলায় প্রথমবারের মতো চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে বন বিভাগ। এই মামলায় মালাকোচা এলাকার চারজনই আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। তবে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

স্থানীয়রা জানান, তাদের ফসল ও জানমাল রক্ষা করতে হাতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়। আর এই যুদ্ধ এক বা দুইদিনের নয়, এটা দীর্ঘদিনের। একমাত্র সরকার সীমান্তবাসীদের জন্য উদ্যোগ নিলে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসন হবে।

গতকাল বুধবার নালিতাবাড়ীর পানিহাটা এলাকার ফজল মিয়া বলেন, ‘গত রাইতে (রাতে) আমার ধানক্ষেতে একটা হাতি আহে (আসে)। হাতিটি ক্ষেতের এক পাশের ধান খাইয়ে (খেয়ে) ফেলে। পরে এলাকাবাসী এসে ফটকা ও মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়ায়।’

একই গ্রামের বাসিন্দা লাল মিয়া বলেন, ‘ভাই আনহেরা (আপনারা) আহুইন (আসেন) আর ছবি তুলে নিয়ে যানগা। কোনো সুমতো (সময়) কিছুই দিলেন না। হাতির দল এতো ক্ষতি করতাছে, ক্ষেত খাইতাছে, বাড়িতে আক্রমণ করতাছে। আমরা বউ-পোলাপান নিয়ে কই যামু?’

শ্রীবরদীর বালিজুড়ির মালাকোচা এলাকার কৃষক রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘হুনতাছি হাতির জন্য বেড়া দিবো, কিন্তু দেই না তো, খালি হুনতাছি হবো হবো, কিন্তু হয় না তো।’

বালিজুড়ি রেঞ্জ অফিসার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘দিন দিন বন দখল হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে হাতি লোকালয়ে চলে আসছে। ওই অবৈধ দখলে থাকা জমি উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তালিকা পাঠানো হয়েছে।’

সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, পরিকল্পিতভাবে সীমান্তে হাতি হত্যা করা হচ্ছে। এটা দেখার দায়িত্ব বন বিভাগের। কিন্তু বন বিভাগের দায়সারা নজরদারির কারণে গত চার মাসের ব্যবধানে চারটি হাতি হত্যার ঘটনা ঘটে। একমাত্র সরকারই পারে এই হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসন করতে।

শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক আবু ইউসুফ বলেন, ‘হাতির যাতায়াতের জন্য সীমান্ত দিয়ে অভয়ারণ্যের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। পাশাপাশি অবৈধভাবে যারা বনের জমি দখল করে আছে, তাদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনের সহযোগিতায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ বলেন, ‘অবৈধভাবে বনের জমি যারা দখল করে আছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দ্বন্দ্ব নিরসনে গারো পাহাড়ে তৈরি হচ্ছে হাতির জন্য অভয়ারণ্য। এরই মধ্যে জমি নির্ধারণ ও মালিকানা চিহ্নিতের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি, শিগগিরই হাতি-মানুষের যে দ্বন্দ্ব, তা নিরসন হবে।’

মন্তব্য

Beta version