-->
শিরোনাম

শ্লীলতাহানির অভিযোগে শিক্ষককে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ

গাজীপুর প্রতিনিধি
শ্লীলতাহানির অভিযোগে শিক্ষককে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ

গাজীপুর মহানগরের গাছা এলাকার গাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সপ্তর শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষককে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে সহপাঠী শিক্ষার্থীরা।

রোববার (২৭ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওই বিদ্যালয়ের ভেতরে এবং পরে মূল ফটকের সমানের রাস্তা বন্ধ করে সহপাঠীরা বিক্ষোভ করে। পরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন গাছা থানার পুলিশ গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা জানায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান কাম শিক্ষক কায়েদে মিল্লাত সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে মোবাইল ফোনে ডেকে এনে শ্লীলতাহানি করে। এ বিষয়ে ওই শিক্ষার্থীর পরিবার বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

পরে এক মিটিংয়ে শ্লীলতাহানির বিষয়টি তদন্তের জন্য অভিভাবক সদস্যের একজন এবং বিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক দিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়। ওই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এছাড়া ওই অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িক বরখান্ত করার কথাও বলা হয়।

কিন্তু কয়েক দিন যেতে না যেতেই অভিযুক্ত ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসছে এবং তার কাজ চালাচ্ছে। তাই অভিযুক্ত কায়েদে মিল্লাতকে বহিষ্কার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তারা এ বিক্ষোভ করেছে।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী স্কুলের কোনো শিক্ষকের কাছে অভিযোগ করেনি। সভাপতির কাছ থেকে আমরা জেনেছি তার কাছে শ্লীলতাহানির লিখিত অভিযেগ করেছে। তারপর সবার সম্মতিতে তদন্ত কমিটি করে অভিযুক্ত শিক্ষককে কয়েকদিন ছুটিতে রাখা হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘তদন্ত কমিটির তিনজনের মধ্যে দুইজন তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে রিপোর্ট দিলেও কমিটির প্রধান অজ্ঞাত কারণে তদন্তে অংশগ্রহণ করেননি। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখান। পরে বিষয়টি জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়।’

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘স্কুলের সব শিক্ষার্থী এবং তদন্ত কমিটির দুইজনসহ সব শিক্ষক মনে করছেন, বিষটি একটি ষড়যন্ত্র। সব বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিসে জানিয়ে কায়েদে মিল্লাতকে বিদ্যালয়ে নিয়মিত করা হয়।’

এখন যারা বিক্ষোভ করছে তারা বেশ কয়েকজন এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী এছাড়া বহিরাগত রয়েছে অনেকে। তাদের এ বিক্ষোভ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে একটি কুচক্রী মহল কলকাঠি নাড়ছে। বিদ্যালয়ের যারা শিক্ষার্থী তারা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত নিয়মিত ক্লাস করছে। তাদের মধ্যে কেউই বিক্ষোভ করেনি বলে প্রধান শিক্ষক জানান।

অভিযুক্ত কায়েদে মিল্লাত বলেন, ‘কয়েকজন মিলে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। গত ১৫ মার্চ বিদ্যালয়ের সামনে আমাকে খুন ও জখমের হুমকি এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির ভয় দেখানো হয়। এ বিষয়ে আমজাদ হোসেন (৪৯), রাশেদুজ্জামান জুয়েল মন্ডল (৩৭) এবং ফজলুল বারী (৫৯) এই তিনজনের নাম উল্লেখ করে ২১ মার্চ গাজীপুর মেট্রোপলিটন গাছা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।’

এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. জুবায়ের সাঈদ জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ তাকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। পরে তাকে বিষটি তদন্ত করে দেখতে বলা হয়। তদন্তে ওই শিক্ষক অভিযুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি রাশেদুজ্জামান জুয়েল মন্ডল বলেন, আমার কাছে ভিকটিমের পরিবার লিখিত অভিযোগ করেছে। পরে ভিকটিমের সঙ্গে আমি এবং প্রধান শিক্ষকসহ অনেকে কথা বলেছি। এছাড়া আরো কিছু বিষয়ে জানতে পেরে মনে হয়েছে শ্লীলতাহিনর বিষয় সত্য। তাই ওই অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও প্রধান শিক্ষকের অসহযোগিতার কারণে তা নেওয়া হয়নি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন গাছা থানার অফিসার ইনচার্জ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে শান্ত করা হয়। পরে প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে ভিকটিমের পরিবারকে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে। পরে থানা পুলিশ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেবে।’

যে পর্যন্ত বিষয়টি তদন্তাধীন থাকবে ওই পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষক বিদ্যালয়ের আসতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মন্তব্য

Beta version