-->
শিরোনাম

ভেকু দিয়ে পাথর আনলোড, লুপ লাইনে ক্ষতি

শরিফুল ইসলাম, নীলফামারী
ভেকু দিয়ে পাথর আনলোড, লুপ লাইনে ক্ষতি
ঝুঁকি নিয়ে পণ্যবোঝাই ওয়াগন এই রেললাইনে ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়

অপরিকল্পিতভাবে পণ্য খালাসের কারণে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের লেক লাইনের যন্ত্রাংশ উধাও হয়েছে। কাঠের স্লিপার ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একাধিক লুপ লাইন। বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে পণ্যবোঝাই ওয়াগনগুলো ওই রেললাইনে নেওয়া হচ্ছে। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।

সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার ও গুডস হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্বে থাকা ট্যান্ডেলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রেলওয়ে প্রকৌশলীর।

সৈয়দপুর রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান মৃধা জানান, স্টেশনের পাঁচ নম্বর লুপ লাইনটি পাথর আনলোড ও ভেকু ব্যবহার করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও পাথর আনলোডে ভেকু ব্যবহার করায় লুপ লাইনের প্রায় দেড় শতাধিক কাঠের স্লিপারের দুই পাশের বর্ধিতাংশ ভেঙে গিয়েছে। এতে লুপ লাইনটিতে ওয়াগন প্রবেশের অনুপযোগী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়ে সৈয়দপুর স্টেশনমাস্টারকে অবগত করা হলেও তিনি ঝুঁকি নিয়ে পাথরের ওয়াগন ওই লুপ লাইনে প্রবেশ করাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

প্রকৌশলী সুলতান মৃধা আরো জানান, ভেকু দিয়ে পাথর আনলোডের কারণে লুপ লাইনের পাশে লেক লাইনটির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এরই মধ্যে ওই লাইনের প্রায় ১০০ ফুটের মধ্যে কোনো টানা রড ও ডিউ ব্লকের অস্তিত্ব নেই। এতে লেক লাইনের দুটি রেলপাত অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। যে কোনো সময় চুরি হয়ে যেতে পারে রেলপাত দুটি। এ বিষয়ে স্টেশনমাস্টারকে পরপর আটবার চিঠি পাঠিয়ে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেলপথ চালু হওয়ায় বাংলাদেশের আমদানিকারকরা এই পথে পাথর আমদানি করছেন। পাথরের ওয়াগনগুলো নীলফামারীর চিলাহাটি হয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে এনে তা আনলোড করা হয়। এরই মধ্যে সহস্রাধিক ওয়াগন থেকে ভারতীয় পাথর আনলোড করা হয়েছে এই স্টেশনে।

কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে ও অদক্ষ শ্রমিকের মাধ্যমে দিন-রাত পাথর আনলোড করায় রেললাইনের (ট্রাক) ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাথরগুলো রেলপথের ওপর ফেলে দেওয়ার পর আমদানিকারকরা ভেকু মেশিন দিয়ে তা পণ্যবাহী ট্রাকে লোড করছেন। এতে রেলপথের দুপাশের মাটিসহ কাঠের স্লিপার ও রেলপাতের যথেষ্ট ক্ষতিসাধন হয়েছে। চুরি হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক টানা রড ও ডিউ ব্লক।

সৈয়দপুর স্টেশনের পণ্যবাহী ট্রেনের মালামাল আনলোড শ্রমিকদের সর্দার আফতাব আলম জানান, নির্দিষ্ট সময়ে ওয়াগনের মালামাল খালাস করতে চুক্তিভিত্তিক অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগের মাধ্যমে দিন-রাত কাজ করতে হয়। এতে রেলের ট্রাকে পাথর তো পড়বেই।ওয়াগন খালি করা তাদের কাজ। রেলের ক্ষতি তারা করছেন না। রেলের যন্ত্রাংশ চুরির বিষয়টি তারা জানেন না বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের হাবিলদার মোহাম্মদ এরশাদ জানান, এ স্টেশনে সাত জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন, যা যথেষ্ট নয়। এদিকে শ্রমিকরা অবৈধভাবে রাতের বেলায় ওয়াগন থেকে মালামাল খালাস করছে স্টেশনমাস্টারের নির্দেশে।

তিনি জানান, সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার ও গুডস্ ক্লার্ককে বারবার বলা সত্ত্বেও মালামাল ভর্তি ওয়াগনের হিসেব বা ছাড়পত্র নিরাপত্তা বাহিনীকে দেওয়া হচ্ছে না।

সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার শওকত আলী জানান, লেক লাইনটি প্রায় ২৫ বছর ধরে মেরামত করা হয়নি। তাই এ লাইনে কোনো মালামাল খালাস করা হয় না। ফলে রেলের যন্ত্রাংশ বা রেলপাতের ক্ষতিগ্রস্তের বিষয়ে প্রকৌশলীর অভিযোগটি সত্য নয়।

‘এ ছাড়া চলাচলের অনুপযোগী লুপ লাইনটিকে মাটি ও ইটের টুকরো দিয়ে উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। তাই ওই রেলপথে পণ্যবাহী ট্রেন প্রবেশ করানো নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘খাদ্যপণ্যের ওয়াগন চুরি হতে পারে- এ কারণে রাতের বেলায় খালাস করা হয় না। কিন্তু পাথরের ওয়াগন খালাসে কোনো বাধা নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে করা হয় বলে জানান তিনি।

মন্তব্য

Beta version