-->
শিরোনাম

চারতলা বাড়ির মালিক পেলেন টিসিবির কার্ড!

কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ ব্যুরো
চারতলা বাড়ির মালিক পেলেন টিসিবির কার্ড!
চারতলা বাড়ির মালিক পেলেন টিসিবির কার্ড

ময়মনসিংহে টিসিবির নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার ফ্যামিলি কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চারতলা বাড়ির মালিকসহ স্বচ্ছল ব্যক্তিরাও পেয়েছেন এ কার্ড। এর ফলে মূলত যেসব হতদরিদ্রের জন্য কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তারাই এখন বঞ্চিত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর আকুয়া মাদ্রাসা কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার চারতলা বাড়ির মালিক। সেই বাসা থেকে প্রতি মাসে ভাড়া পান লাখ টাকার উপরে। তিনিও পেয়েছেন টিসিবির পণ্য কেনার ফ্যামিলি কার্ড। এছাড়া তার স্ত্রী হেলেনা, শ্যালিকা রেহেনা ও তার মেয়েকেও কার্ড দেওয়া হয়েছে।

কার্ড পেয়েছেন সরকারি চাকরিজীবী হামিদ উদ্দিন রোডের বাসিন্দা আব্দুল জলিলসহ তার স্ত্রী। একই এলাকার স্বচ্ছল আব্দুর রহমান পরিবারের চারজনও কার্ড পেয়েছেন। এরকম অনেকে সরকারি এ সুবিধার আওতায় আসলেও অসংখ্য হতদরিদ্র লোকজন বঞ্চিত হয়েছেন।

চারতলা বাড়ির মালিক হয়েও টিসিবির কার্ড নেয়ার কারণ জানতে চাইলে মালিক আব্দুল জব্বার দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, সরকারি সুবিধা সবার জন্য সমান। এজন্য আমিও কার্ড সংগ্রহ করেছি। এটা আমার প্রাপ্য।

আব্দুল জলিল কার্ড পাওয়ার বিষয়ে কিছু না বললেও তার ছেলে দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, আমাদের পরিবারের সদস্যরা সবসময় কাউন্সিলরকে ভোট দেয়। এছাড়া আমরা কাউন্সিলরের আত্মীয়। তাই দুটি কার্ড পেয়েছি।

কার্ড পেয়ে খুশি আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, কাউন্সিলরের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। তাই আমি ও স্ত্রীসহ বোন-ভাগ্নের নামে চারটি কার্ড পেয়েছি।

আপনাদের পাওয়া কার্ডগুলো হতদরিদ্রদের প্রাপ্য ছিল কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা কাউন্সিলরের ব্যাপার। তারা যাচাই-বাছাই করেই কার্ড দেন। আমার কম দামে পণ্য প্রয়োজন, তাই কার্ড নিয়েছি। যারা বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের উচিত কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করা।

এভাবে স্বচ্ছলদের কার্ড দেয়ায় বঞ্চিত হয়েছেন মাদ্রাসা কোয়ার্টার এলাকার দিনমজুর ফয়জুল হক, জালাল উদ্দিনসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের অসংখ্য নিম্নবিত্ত আয়ের লোকজন।

বঞ্চিতদের অভিযোগ, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তিকে এবং অনেক ধর্নাঢ্য পরিবারকে কার্ড দেওয়া হয়েছে। ভোটের হিসেব কষে এ কার্ডগুলো বিতরণ করেছেন কাউন্সিলরা। নিজপক্ষের ভোটারসহ আত্নীয়-স্বজনদের কার্ড দেওয়া হয়েছে।

চারতলা বাড়ির মালিকের হাতে কার্ডের বিষয়টি জানতে চাইলে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মিন্টু দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে গরিব ও হতদরিদ্ররা কার্ড পেয়েছে। লাখ টাকা আয়ের লোকজন নেই বললেই চলে। স্বজনপ্রীতি করে কাউকে কার্ড দেওয়া হয়নি। ওই ব্যক্তি কিভাবে কার্ড পেল তা জানার চেষ্টা চলছে।’

নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শরীফুল ইসলাম শরীফ বলেন, ‘আমি নিম্নবিত্ত লোকদের কার্ড বিতরণ করেছি। তবে আমার ওয়ার্ডে নিম্নআয়ের মানুষের সংখ্যা কম থাকায় কিছু কার্ড মধ্যবিত্ত লোকদের হাতেও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের মতো করে মেয়রের কাছ থেকে কার্ড এনে বিতরণ করেছেন। নিম্নবিত্ত শ্রেণির যারা বাদ পড়েছেন তাদেরকেও কার্ডের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘যারা কার্ড পাওয়ার উপযুক্ত তাদেরকেই কার্ড দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা সবকিছু তদারকি করছি। কোথাও কোনো অসংগতির প্রমাণ মিললেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলায় ১৫৩ জন ডিলারের মাধ্যমে ৫৬৬টি স্থানে ৩ লাখ ২ হাজার ৯৭১ জন পাবেন টিসিবির পণ্য। এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশনে ৭০ হাজার ৪০৯ জনকে পণ্য দেওয়া হবে।

প্রতিজন উপকারভোগী প্রতি কেজি ৫৫ টাকা দরে ২ কেজি চিনি, ৬৫ টাকা দরে মশুর ডাল ও প্রতি লিটার ১১০ টাকা দরে ২ লিটার করে সয়াবিন তেল কিনতে পারবেন।

প্রথম ধাপে গত রোববার থেকে শুরু হওয়া টিসিবি পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চলবে ২৭ মার্চ পর্যন্ত।

মন্তব্য

Beta version