-->
শিরোনাম
উচ্চফলনশীল নতুন জাত

‘ত্বীন’ চাষে বিপ্লবের সম্ভাবনা

কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ ব্যুরো
‘ত্বীন’ চাষে বিপ্লবের সম্ভাবনা
উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ত্বীন ফল

মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীনের উচ্চফলনশীল নতুন জাত উদ্ভাবনে সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) একজন বিজ্ঞানী। দুই বছর গবেষণায় এ সাফল্য পেয়েছেন তিনি।

ওই গবেষকের নাম ড. নাসরীন আখতার। তিনি বিনার উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।

বিনা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে ত্বীন ফল সহজলভ্য করার জন্য ২০২০ সালের শুরুতে মিশর থেকে ত্বীনের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করা হয়। এরপর উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের ছাদসহ কয়েকটি স্থানে পুরোদমে গবেষণা চলে। অন্য জাতের চেয়ে এটির নানা গুণাগুণ বিবেচনায় চলতি বছরের মার্চ মাসে গবেষণায় সাফল্য মেলে।

আগামী এক বছরের মধ্যে বিনা ত্বীন-১ নামে জাতীয় বীজ বোর্ডের অনুমোদনের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে। এরপরই চাষাবাদের জন্য সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

সরেজমিনে ত্বীন গবেষণাধীন ছাদে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট গাছগুলোতে কাঁচা কাঁচা ফল ঝুলে আছে। প্রত্যেকটি পাতার এক-একটি বোটায় ফল ধরেছে। বেশি ফল ধরা গাছগুলো মাটির দিকে নুয়ে পড়েছে। পাকা ফলগুলোর অর্ধেক অংশ পাখি খেয়ে ফেলেছে। সুস্বাদু পাকা ফলটি পুরোপুরি খেতে চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ।

জাতটির গবেষক ড. নাসরীন আখতার দৈনিক ভোরের আকাশকে জানান, মানুষের চাহিদা থাকলেও বাংলাদেশে গুণসমৃদ্ধ ত্বীন ফলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এজন্য বাজারে ফলটি সহজলভ্য করতে পরিকল্পনা করা হয়। চাষাবাদের আওতায় আনতে মিশর থেকে জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করা হয়। এখন গবেষণার ধারাবাহিকতায় উচ্চফলনশীল জাত হিসেবে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।

জাতটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি লাগানোর মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ফল ধরে। এভাবে সারাবছরই ফল ধরবে। প্রতিটি গাছে দুই শতাধিক ফল ধরে। যা অন্য জাতের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। এটি খেতে সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত। পুরোপুরি পাকলে রসে ঠাসা ও মিষ্টি হয়।

প্রতিটি ফলের ওজন ৪৫ থেকে ৫৫ গ্রাম। এটির আকার বড়। যার সাইজ ৪.৫ থেকে ৪.৯ সেমি। টিএসএস ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি ব্রিক্স (মিষ্টির হার)। রোদ কিংবা অল্প ছায়াযুক্ত স্থানেও সমানতালে ফলন হয়। পাকার সঙ্গে সঙ্গেই লাল রঙ ধারণ করে। গাছে রোগ জীবাণু সংক্রমণের মাত্রা একদমই কম। দেশের সব জেলাসহ ছাদেও চাষ করা যাবে এই ফল।

উপকারিতা সম্পর্কে তিনি জানান, নানা রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ত্বীন। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যানসার রোধে এ ফলটি খুবই উপকারী। উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ এটি চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য ও হাঁপানি রোগ নিরাময়েও সহায়তা করে। মানসিক ক্লান্তি দূর করে। এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়ামসহ নানা ভেষজ গুণ রয়েছে।

ড. নাসরীন আখতার জানান, ফলটি নিয়ে আরও কিছু কাজ চলছে। আগামী এক বছরের মধ্যে জাতীয় বীজ বোর্ডের ছাড়পত্র নিয়ে সারাদেশের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটি সম্ভাবনাময় ফসল। যা চাষ করে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. রফিকুল ইসলাম দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, নতুন জাতটি দেশের সব জেলাতেই চাষ করা যাবে। যদি জাতটি ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে ত্বীন চাষে বিপ্লব ঘটবে। দেশের সব বাজারে কম দামে পাওয়া যাবে এই ফলটি।

মন্তব্য

Beta version