ফসল উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সঠিক পরামর্শ ও জরুরি নানা সেবা কৃষকদের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিস।
চালু করা হয়েছে ‘প্ল্যান্ট ডক্টর মোবাইল টিম’ এটি একটি বিশেষ কৃষকসেবা কার্যক্রম। গত ছয় মাসে এ এলাকার চাষাবাদে অনেক পরিবর্তন আর ফলন ভালো হওয়ায় এই সেবা গ্রহণে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের।
জানা যায়, ‘প্ল্যান্ট ডক্টর মোবাইল টিম’ ফসলের রোগ-বালাই ও পোকামাকড়ের প্রেসক্রিপশন দেয়া, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও জাত সম্প্রসারণ, কৃষি আবহাওয়া সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি নিরাপদ ও জৈব কৃষি উপকরণ প্রদর্শন করে।
এছাড়া কৃষি উদ্যোক্তা গঠন, কৃষিবিষয়ক লিফলেট বিতরণসহ আধুনিক ও রপ্তানিমুখী কৃষি গড়ে তোলা। এ ধরনের কাজের জন্য ‘প্ল্যান্ট ডক্টর মোবাইল টিম’ ভ্রাম্যমাণ কৃষিসেবা জনপ্রিয় হচ্ছে প্রান্তিক চাষিদের কাছে।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আদনান বাবুর উদ্যোগে পরিচালিত ‘প্ল্যান্ট ডক্টর মোবাইল টিম’ ভ্রাম্যমাণ কৃষিসেবা সম্পর্কে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। সরকারি এই গাড়িটি কৃষিবিষয়ক নানা ব্যানার ও পোস্টার দিয়ে এমনভাবে মোড়ানো হয়েছে এ যেন একটি কৃষি অ্যাম্বুলেন্স। আর অ্যাম্বুলেন্সের মতো করেই কৃষির আধুনিক নানা উপকরণ পরিবহণ করা হচ্ছে এ পরিবহণে।
সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, সিডলিং ট্রে, ফ্রুটব্যাগ, ময়েশ্চার মিটার, আঠালো ফাঁদ, এলসিসিসহ বিভিন্ন রকম আধুনিক কৃষি সরঞ্জামাদি রয়েছে এ গাড়িতে। আর এগুলোর ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে বিনা খরচে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে গ্রামে গ্রামে গিয়ে।
এছাড়াও কোনো কৃষক তার চাষ সম্পর্কৃত সমস্যা ভ্রাম্যমাণ ওই টিমকে জানালে দ্রুততার সঙ্গে সেখানে গিয়েও সেবা দিচ্ছে এ প্রতিষ্ঠান। আর এসব প্রদর্শনের মাধ্যমে কৃষকদের আধুনিক কৃষি চাষাবাদে আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডাক্তারের মতোই টেবিলে একপাশে চেয়ার পেতে বসে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন প্ল্যান্ট ডক্টররা। অপর পাশে কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সেবা নিচ্ছেন কৃষকরা।
এমন উদ্যোগে নতুন চাষিদের আরো বেশি আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। সেবা নিতে আসা অনেকের কাছে দেখা গেছে, কারো হাতে কাঁঠালের মুচি, কারো হাতে ডালিম গাছের ডাল আবার কেউবা নিয়ে এসেছে লাউয়ের ডগা।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার তারাটিয়া এলাকায় সেবা নিতে আসা একজন চাষি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বিনা খরচে ঘরের কাছে কৃষি সেবার চিত্র এই প্রথম দেখলাম। চাষাবাদে এমন পরামর্শ ও সহযোহিতা থাকলে ফসল চাষে সবারই আগ্রহ বাড়বে।’ সহজে এমন সেবা পেয়ে তিনি অনেক খুশি।
একই উপজেলার থালতাপাড়া গ্রামের কৃষক মো. রনজু জানান, তিনি আধুনিক কৃষি বিষয়ে অনেক পরামর্শ পেয়েছেন এই টিমের কাছ থেকে। আর অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার চাষে খরচ কম লেগেছে আর উৎপাদনও ভালো হবে বলে জানান তিনি।
ওই উপজেলার তেঘরী গ্রামের মাওলানা রুহুল আমিন জানান, সঠিক উপায়ে বোরো বীজতলা তৈরির পরামর্শ পেয়ে তার খুব কাজে লেগেছে। এছাড়াও বর্তমান সময়ে যেকোনো ফসল চাষের আগে কৃষিবিদদের পরামর্শ নেয়া জরুরি। আর এভাবে বাড়ির কাছে এসে ফসলের জরুরি নানা সেবা পাওয়ায় খুশি এলাকার চাষিরাও।
এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণকারী নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আদনান বাবু বলেন, ‘কৃষি প্রধান এ এলাকায় ‘প্ল্যান্ট ডক্টর মোবাইল টিম’ একটি বিশেষ সেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বাড়ানো এবং প্রান্তিক চাষিদের যেকোনো ফসল চাষে উপকৃত করা। এছাড়াও অনেক কৃষক আছে যারা ভুল পরামর্শ ও অজ্ঞতার কারণে সারা বছর চাষ করেও ভালো ফলন পায় না।’ প্রতি সপ্তাহে উপজেলার যেকোনো এলাকায় কৃষকদের দিনব্যাপী সেবা কার্যক্রম চালু রাখা হয় এ ভ্রাম্যমাণ টিমে। ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর, হাট-বাজারের পাশে, রাস্তার মোড়ে যেখানে কৃষকদের জমায়েত বেশি হয় এমন জায়গায় কৃষি সেবা দেওয়া হয়।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. দুলাল হোসেন বলেন, ‘নন্দীগ্রামের কৃষি কর্মকর্তা তার ব্যক্তি উদ্যোগে এমন কার্যক্রম পরিচালনা করায় ওই এলাকার কৃষকেরা বেশি সুফল পাচ্ছেন। আর এমন কাজের জন্য অতিরিক্ত সময় ও শ্রম দুই-ই দিতে হয়। তবে এমন উদ্যোগ অন্যান্য উপজেলায় থাকলে ওইসব এলাকার কৃষকরাও অনেক উপকৃত হতো।’
এ কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষি বিভাগ এবং কৃষকদের মাঝে সেবা আদান-প্রদানের এক নিবিড় সংযোগ তৈরি হয়েছে। এছাড়াও কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দোড়গোড়ায় কৃষি সেবা পৌঁছানোর পাশাপাশি আধুনিক, নিরাপদ, বাণিজ্যিক কৃষি গঠনে সহায়ক ‘প্ল্যান্ট ডক্টর মোবাইল টিম’।
মন্তব্য