-->

খরায় নষ্ট হচ্ছে বোরো ধান

আমীর হামজা, হবিগঞ্জ
খরায় নষ্ট হচ্ছে বোরো ধান
নষ্ট হওয়া বোরোক্ষেত

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর গ্রামের কৃষক রুপক দাস। তিনি এবার সাত কের (২৯ শতকে এক কের) জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। তবে অতিরিক্ত খরা আর পানির অভাবে ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। চৈত্রের মাঝামাঝি সময়ে এসেও ধানগাছে কাক্সিক্ষত শীষ আসেনি। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে রুপকের।

শুধু নবীগঞ্জের রুপকই নয়, জেলার বানিয়াচং, চুনারুঘাট ও শায়েস্তাগঞ্জের কৃষকদেরও একই অবস্থা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় এক লাখ ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাওরে ৪৫ হাজার হেক্টর জমি চাষ হয়েছে। জেলায় মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন।সরেজমিনে বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, বোরোর জমিতে পানি থাকা তো দূরের কথা, অধিকাংশ জমির মাটি শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। এতে শুকিয়ে যাচ্ছে ধানের গাছও। নষ্ট হয়ে যাওয়া কোনো কোনো জমি গরু গিয়ে খাইয়ে দিচ্ছেন কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, নভেম্বর মাস থেকে বোরোর আবাদ শুরু হয়। তবে জমিতে ভালো ফলনের ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারির শেষ ও মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় জমিতে ফুল আসতে শুরু করে। যে কারণে সঠিক তাপমাত্রার সঙ্গে পরিমাণমতো বৃষ্টির প্রয়োজন। সেই অনুপাতে চলতি বছর এক ফোঁটা বৃষ্টিও হয়নি। একদিকে বৃষ্টিপাতের অভাব, অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে সেচেরও ব্যাঘাত ঘটেছে।

কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খরার কারণে বিভিন্ন জায়গায় ২০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত সেচ দিতে হয়েছে। এতে বেড়েছে উৎপাদন খরচও। কিন্তু খরার প্রভাবে বাড়তি সেচ দিয়েও কৃষকরা বোরো ধানের স্বাভাবিক উৎপাদন ধরে রাখতে পারেননি।

নবীগঞ্জ উপজেলার তারানগাঁও গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান জানান, এবার তিন কের জমিতে বোরোধান চাষ করেছেন তিনি। কিন্তু তার অধিকাংশ জমিই খরায় নষ্ট হয়ে গেছে।

গন্ধা গ্রামের আক্কাস মিয়া বলেন, ‘এ বছর এক ফোঁটা বৃষ্টিও হইছে না। ৮ কের ক্ষেত করছিলাম। বৃষ্টি না হওয়ায় সব ক্ষেত নষ্ট হই গেছে।’

বানিয়াচং উপজেলার মাখালকান্দি গ্রামের কৃষক গৌরচাঁদ বলেন, ‘চৈত্র মাসের প্রথমে বৃষ্টি হইলে ধানের জন্য খুব বালা হয়। এতে ধানের থোর দ্রুত বাইর হয়। এ বছর বৃষ্টি হইছে না। তাই ধানের থোর বাইর হইতেছে না। মাঝে মাঝে একটা-দুইটা থোর বাইর হইতেছে, ইতাও রইদের লাগি ঝইলা যাইতেছে।’

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক নয়নমণি সূত্রধর জানান, বৃষ্টি অভাব ও অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে কিছু বোরোর জমি নষ্ট হয়েছে। তবে এতে তেমন ক্ষতি হবে না।

মন্তব্য

Beta version