-->

‘আমার ভাগ্যে কি একটা ঘর জুটব না’

জুয়েল রানা, টাঙ্গাইল
‘আমার ভাগ্যে কি একটা ঘর জুটব না’
ছোট্ট ঘরভাড়া নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন কল্পনা সরকার

‘সরকার কত মানুষরে ঘর দিতাছে। কত ভালো লোকেরাও পাইতাছে। আমিও ঘরের জন্য নাম দিছিলাম, কিন্তু পাই নাই। আমার মতো গরিবের ভাগ্যে কি একটা ঘর জুটব না?’ আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব কল্পনা সরকার।

তিনি আরো বলেন, ‘ঘরটি আমার খুব দরকার। আর ভাড়া দিয়ে থাকতে থাকতে কুলায় না। নিজের ঘর অইলে মেলা খুশি অমু। কষ্ট দূর অইব। পঙ্গু পোলাডারে নিয়া শান্তিতে থাকতে চাই।’

টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালত পাড়ায় ছোট্ট ঘরভাড়া নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন কল্পনা। ওই ছোট্ট ঘরে দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন তিনি।

অন্যের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করেন কল্পনা সরকার। তার বড় ছেলেটি প্রতিবন্ধী। শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ডে হুইল চেয়ারে ভিক্ষা করেন তিনি। আর ছোট ছেলে দোকানে কাজ করেন। কল্পনার স্বামী স্বাধীন তাদের ভরণপোষণ না করে অন্যত্র থাকেন।

কল্পনা জানান, তাদের কোনো জায়গা জমি নাই। ধোঁয়া মোছার কাজ করে মাসে ওই দুই বাসা থেকে ১৮০০ টাকা পান। তার প্রতিবন্ধী ছেলেটা ভিক্ষা করে। আর ছোট ছেলে ঝালাইয়ের দোকানে কাজ করে দিনে ৫০ টাকা পান।

তিনি বলেন, ‘সবাই মিলা যা কামাই করি তা ঘরভাড়া, খাওন ও ওষুধ কিনতেই শেষ হয়ে যায়। খুবই কষ্টে দিন পার করি। আমার বাবা পাঁচ সন্তান রাইখা মারা যায়। বাবার ঘর থেকেই খাইয়া না খাইয়া বড় হইছি। জীবনে আর সুখ পাইলাম না। আর পারছি না।’

কল্পনার প্রতিবেশী সোহাগী দাস বলেন, ‘ওদের অনেক কষ্ট। জামাইটা অকর্মা। ঘুরে ঘুরে খায়। বউ ছেলেদের খবর রাখে না।’

পূর্ব আদালত পাড়ার হারুণ-অর-রশিদের বাসায় ভাড়া থাকেন কল্পনা। তিনি বলেন, ‘শুনেছি কল্পনাদের বাড়িঘর কিছুই নাই। ওরা মাসে ১২০০ টাকায় ভাড়া নিয়ে অনেক দিন ধরে আমার বাড়িতে থাকেন। চিন্তা করছি তাদের ভাড়া মওকুফ করে দেব।’

স্থানীয় পৌরসভার কাউন্সিলর কামরুল হাসান মামুন বলেন, ‘এই অসহায় পরিবারটি অনেক বছর ধরে আমার ওয়ার্ডে ভাড়া থাকে। তাদের কোনো জায়গা জমি নাই। আমি পৌরসভা থেকে সাহায্য-সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। তারা সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার দাবিদার। কল্পনা সরকার প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে মাথা গোঁজার একটি স্থায়ী ঘর পেলে আমরাও খুশি হব।’

জেলা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ বলেন, ‘অসহায় কল্পনার পরিবারের জন্য একটি স্থায়ী ঘর দরকার। যাতে তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে জীবনের শেষ সময়ে যেন নিজের ঘরে ঘুমাতে পারেন। এ বিষয়ে সুদৃষ্টি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।’

মন্তব্য

Beta version