-->
শিরোনাম
যশোরে মার্চে সড়কে ঝরেছে ১৩ প্রাণ

লাল রক্তে কালো পিচ প্লাবিত

এইচ আর তুহিন, যশোর ব্যুরো
লাল রক্তে কালো পিচ প্লাবিত
যশোরে দুর্ঘটনা কবলিত বাস-ট্রাক

যশোরের সড়কে প্রায়ই ঝরছে তাজা প্রাণ। আর তাদের তাজা রক্তে প্লাবিত হচ্ছে সড়কের কালো পিচ। প্রতিনিয়ত হাসপাতাল চত্বর থেকে ভেসে আসে কান্নার রোল, যার অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু কিংবা শুরুতর জখম হওয়া স্বজনদের করুণ আওয়াজ।

কোনো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে কিংবা পঙ্গুত্ববরণের কারণে স্বজনরা নির্বাক হয়ে পড়েন। অসহায় হয়ে পড়েন সংসার চালাতে। পরিবারে আচমকা নেমে আসে কালো মেঘের থাবা।

বেপরোয়া গতি ও চালকরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হওয়ায় সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ।

চলতি মার্চ মাসে এ পর্যন্ত যশোর জেলায় ১৫টির বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন। আর শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে এখনো কেউ কেউ হাসপাতালেই রয়েছেন। আবার অনেকে হারিয়েছেন হাত, পা অথবা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ।

যশোর সদর হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৩ মার্চ বুধবার পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় যশোরে তিনজন নিহত হন। এদিন আহত হন অন্তত ২০ জন। তাদের মধ্যে নয়জন যশোরে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

ওইদিন নিহতরা হলেন- যশোরের মনিরামপুর উপজেলার উত্তরপাড়া গ্রামের আশির আলীর ছেলে তাজউদ্দিন (৩৮), একই গ্রামের লিটন হোসেনের ছেলে মুন্না হোসেন (২২) ও জেলরোড এলাকার আসলাম হোসেনের ছেলে শরিফুল ইসলাম।

নিহত শরিফুলের সাত বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। আচমকা শিশুটি হলো এতিম। আর স্বামী হারিয়ে তার স্ত্রী দিশেহারা। কি করবে বুঝতে পারছেন না। তাদের পুরো পরিবারে নেমেছে শোকের ছায়া।

নিহত তাজউদ্দিনের স্ত্রী হাসপাতাল চত্বরে গড়িয়ে কান্না করছিলেন। যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। সবে মাত্র বছর খানেক হলো বিয়ে হয়েছে তার। এ সময় বুকে পাথর বেঁধে ছেলের স্ত্রীকে শান্ত্বনা দিচ্ছিলেন তাজউদ্দিনের বাবা।

২০ মার্চ সদরের ঘুনি এলাকায় প্রাণ হারান দুই বিএনপি নেতা। একই দিনে আরো একজন পাড়ি দেন পরপারে। আর আহত হয়েছিলেন অন্তত ১০ জন। এদিনে মারা যান সদর উপজেলার ঘুনি গ্রামের চেরাক আলী মোল্লার ছেলে সাইফুর রহমান (৬০), একই গ্রামের মোদাচ্ছের মজুমদারের ছেলে মনজেল মজুমদার (৫৫) ও বাঘারপাড়া উপজেলার মাঝিয়ালি গ্রামের ইন্দ্রভূষণ সরকারের ছেলে রণজিৎ সরকার (৬৫)।

১৭ মার্চ বৃহস্পতিবার শহরের ঢাকা রোড এলাকায় মাইক্রোবাসের চাপায় প্রাণ হারান সাকলাইন (২০) নামে এক মাদ্রাসাছাত্র। ১২ মার্চ শনিবার সকালে বাঘারপাড়ার জামালপুর গ্রামের ইটবাহী গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টিটো (৩০) নামে এক শ্রমিক আহত হয়েছিলেন। তার দুই পায়ে জখম হয়েছিল। তাকে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে হাসপাতালের চিকিৎসক বলেন, তার পা কেটে বাদ দিতে হতে পারে।

এর আগের দিন যশোর-রাজগঞ্জ সড়কের খেদাপাড়া এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হন তিন বন্ধু। তাদের মধ্যে দুইজন পাড়ি জমান পরপারে। বোনের বাড়ি থেকে ফিরছিলেন তারা। তারা হলেন মনিরামপুর উপজেলার কিসমত চাকলা গ্রামের এরশাদ আলীর ছেলে শাওন হোসেন (২২) ও একই এলাকার মৃত কাশেম আলীর ছেলে ইমরান হোসেন (২২)। একই ঘটনায় আসিফ হোসেন নামের তাদের এক বন্ধু গুরুতর আহত হন।

এদিন সকালে আরো একটি দুর্ঘটনা ঘটে। যশোর-বেনাপোল সড়কের লাউজানী এলাকায় যাত্রীবাহী বাস উল্টে যায়। এ ঘটনায় তোতা মিয়া (৩৫) নামে বাস হেলপারের মৃত্যু হয়। একই সময়ে প্রায় ৪০ জন আহত হন। তোতা মিয়া সদর উপজেলার মাহিদিয়া গ্রামের হাফিজুর শেখের ছেলে।

৩ মার্চ বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টার দিকে ঝিকরগাছা-কায়েমকোলা সড়কের রানিয়ালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে প্রাণ হারান মজনুর রহমান (৩২) নামে এক ব্যবসায়ী। পাওয়ারটিলার ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে তিনি নিহত হন।এর আগের দিন যশোর-মাগুরা সড়কের গাবতলা এলাকায় বাস উল্টে প্রায় ৩০ জন আহত হন। আহতদের অন্তত ১৫ জন যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

চলতি মাসের প্রথম দিনেই সড়ক দুর্ঘটনায় নাসির হোসেন (১৮) নামে এক তরুণের মৃত্যু হয়। শহরের খাজুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এ ব্যাপারে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ বলেন, যশোরে মার্চ মাসে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য আমাদের কাছে আছে। অন্যান্য মাসের থেকে এ মাসে প্রাণহানির বেশি হয়েছে। ‘মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে চালক ও আরোহী হেলমেট ব্যবহার না করায়। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক হতে হবে। প্রশাসনেরও উদ্যোগ নিতে হবে।’

‘যশোরের সড়কগুলো প্রশস্ত কম। মহাসড়কগুলো কমপক্ষে চারলেনে করতে হবে। আর বেপরোয়া গতি ও চালকরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হওয়ায় সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে’, যোগ করেন তিনি।

 

মন্তব্য

Beta version