স্কুলটি প্রায় ৮৮ বছরের পুরোনো। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তানের শাসনামল ও মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুর সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্কুলটি। নানা প্রতিকূলতাকে ছাপিয়ে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।২০১৮ সালে বিদ্যালয়টিকে সরকারিভাবে জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এ স্কুলটিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় আটশত। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রও এটি। তবে স্কুলটির বেশিরভাগ শ্রেণিকক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও ওইসব শ্রেণিকক্ষে ক্লাস চলছে নিয়মিত।
বলছি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কথা।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৪ সালে স্কুলটিতে একটি পাকা ভবন এবং পরে আরেকটি সেমিপাকা ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দশক পেরিয়ে যাওয়ায় দুটি ভবনই এখন জরাজীর্ণ।
পাকা ভবনটির পলেস্তরা ও ছাদের ঢালাই খসে খসে পড়ছে। ঢালাই খসে গিয়ে ভেতরের রড দৃশ্যমান হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি চুয়ে পড়ছে। ভবনে নেই কোনো বৈদ্যুতিক সংযোগ।
একই অবস্থা সেমি পাকা ভবনেরও। সেখানে টিনের চাল ফুটো, স্থানে স্থানে মটকা নেই। চালের আড়া ভেঙে গেছে। স্যাঁতস্যাঁতে দেয়ালে নেই পলেস্তরা। এমন পরিস্থিতিতে ভবনগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার জন্য উপজেলা কমিটির কাছে আবেদন দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বুধবার সকালে বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের দুটি ভবন ৬০ ও ৮০ দশকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে নির্মাণ হয়। ভবনের কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় ও শিক্ষকদের অফিস রুমও রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। গত দুই বছর ধরে এভাবেই ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা। নিয়মিত ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরাও। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মনি জুই বলে, ‘আমাদের ক্লাসরুমের ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা ভয়ে ভয়ে সব সময় ক্লাস করি। মাঝে মাঝে প্লাস্টারের গুঁড়া এসে আমাদের গায়ে মাথায় পড়ে। এটি ভেঙে ফেলে নতুন ভবন নির্মাণ করলে আমাদের লেখাপড়ার জন্য খুবই ভালো হবে।’
সহকারী শিক্ষক আইয়ুব আলী বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করাতে গিয়ে আমাদেরকে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। শিক্ষকদের বসার রুমটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আমরা মাঝে মাঝে বাইরে গিয়ে বসি।’
প্রধান শিক্ষক জাবেদ আলী খন্দকার বলেন, ‘পুরোনো জরাজীর্ণ আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চলছে। সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ স্কুল পরিদর্শনে এসে নতুন ভবন নির্মাণ প্রয়োজন জানিয়ে একটি ডেমি অফিশিয়াল লেটার (ডিও) দিয়েছেন। আমাদের নতুন ভবন নির্মাণ খুবই জরুরি। কর্তৃপক্ষ দ্রুত ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা না নিলে পাঠদান কার্যক্রম চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।’
উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা আব্দুল হাই বলেন, ‘বিদ্যালয়টির ভবনগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছেন। এতে শিক্ষার্থীরা সবসময় আতঙ্কিত থাকেন। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে আমি বিষয়টি সমাধানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন দাস বলেন, ‘বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দুটি ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার জন্য একটি আবেদন আমরা পেয়েছি। আবেদনটি সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর বিষয়টির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া ইতিমধ্যে বিদ্যালয়টি জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয় পরিদর্শন করেছেন।’
মন্তব্য