রমজান জুড়ে প্রায় ৫০০ পরিবারকে বাজারমূল্যের প্রায় অর্ধেক দামে খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করছে যশোরের আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা। ‘নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত’ পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ‘আইডিয়া লস্ প্রজেক্ট’ নামে কর্মসূচি শুরু করেছে সংগঠনটি। ‘মানব কল্যাণে আমরা ঠকতে চাই’, স্লোগানে যশোর শহরের খড়কি এলাকায় সংস্থার কার্যালয়ে মঙ্গলবার এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
আয়োজকরা জানান, এই প্রোজেক্টের আওতায় পুরো রমজান মাসে প্রায় ৫০০ পরিবারের কাছে লোকসানে পণ্য বিক্রি করা হবে। পরিবার প্রতি ৫০ টাকা কেজি দরের চাল ২৫ টাকায় ৫ কেজি, ১৬৮ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল ১২০ টাকায়, দেড়শ টাকার খেজুর ৮০ টাকায়, ৩৫০ টাকা দরের খেজুর ২০০ টাকায়, ৪০ টাকার ২ কেজি আলু ২০ টাকায়, ৫০ টাকার চিড়া ৩৫ টাকায়, ৮০ টাকা কেজির ছোলা ৫০ টাকায়, ৮০ টাকার চিনি ৫০ টাকায়, ৯০ টাকা কেজি দরের মসুর ডাল ৬০ টাকায় এবং ৩০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ ১৫ টাকায় প্রদান করা হচ্ছে।
অর্থাৎ প্রতি প্যাকেজ ৫৫৫/৬৭৫ টাকায় প্রদান করা হচ্ছে। যার স্বাভাবিক বাজার মূল্য ৯৪০/১১৪০ টাকা। প্রতি পরিবার সপ্তাহে একবার মোট চারবার এ পণ্য ক্রয়ের সুযোগ পাবেন। কেউ চাইলে সব পণ্য নিতে পারবেন বা পছন্দমতও ক্রয় করতে পারবেন।
আইডিয়া’র লস্ প্রজেক্টের কো-অর্ডিনেটর ও সংস্থার সাবেক সভাপতি হারুন অর রশিদ জানান, আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত সমাজকল্যাণমূলক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। এই প্রজেক্টের আওতায় শিক্ষার্থীরা পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ‘লস’ করার উদ্দেশ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ‘ব্যবসা’ করছে। সহজ কথায়, তারা বেশি দামে জিনিস কিনে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মাঝে কম দামে বিক্রি করছে। সবমিলিয়ে আইডিয়া রমজান মাসের এই প্রজেক্টে তিন লক্ষাধিক টাকা ভর্তুকি দিয়ে ‘লস’ করতে যাচ্ছে।
আইডিয়া থেকে পণ্য ক্রয় করা শহরের খড়কি এলাকায় নিম্ন আয়ের ইলিয়াস হোসেন ও গোলাম মোস্তফা জানান, বাজারে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। এখানে অনেক কম দামে কিনতে পারছি। পুরো রমজান মাসে এই দামে জিনিস কিনে কিছুটা হলেও শান্তিতে থাকতে পারব।
সন্দীপণ স্কুল এলাকার বাসিন্দা শাহনাজ খাতুন জানান, টানাটানির সংসারে রমজান মাস কিভাবে পার করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখন এভাবে কম দামে জিনিস কেনার সুযোগ পেলাম। এতে আমাদের সংসার চালানো একটু হলেও সহজ হবে।
আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা যশোর সরকারি এমএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, পৃথিবীর প্রায় সব মুসলিম দেশেই রমজান মাস আসলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমে।
আর বাংলাদেশে বৃদ্ধি হয়। রমজানে সংযম ও আত্মশুদ্ধির সকল শিক্ষাকে ভুলে গিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও মজুতদারির মাধ্যমে সীমাহীন ‘লাভের লোভ’-ই এর জন্য দায়ী। এ সংকটের নির্মম শিকার সমাজের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা।
নিম্নবিত্তের মানুষেরা সরকারি/বেসরকারি বিভিন্ন ‘ত্রাণ’ সুবিধার জন্য মানুষের কাছে হাত পাততে পারলেও চক্ষু লজ্জার খাতিরে ‘মধ্যবিত্ত’ তাদের কান্না লুকিয়েই রাখে। ‘আইডিয়া লস প্রোজেক্ট’ পরোক্ষভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির সহনশীলতার মধ্যে নিয়ে আসার একটি প্রকল্প।
মন্তব্য