দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় চিকিৎসা শেষে ১৯ শকুনকে অবমুক্ত করা হয়েছে। শনিবার (২ এপ্রিল) দুপুরে সিংড়া জাতীয় উদ্যানের শকুন চিকিৎসা ও পরিচর্যা কেন্দ্র থেকে শকুনগুলোকে মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সিংড়া জাতীয় উদ্যান দেশের একমাত্র শকুন চিকিৎসা ও পরিচর্যা কেন্দ্র। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার হওয়া বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী শকুন সংগ্রহ করে এই উদ্যানে এনে চিকিৎসা ও পরিচর্যা করা হয়। সুস্থ হলে পুনরায় তাদের মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২০১৬ সাল থেকে এই কার্যক্রম হয়ে আসছে। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
শনিবার বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর ও আইইউসিএন বাংলাদেশের আয়োজনে শকুন অবমুক্তকরণ ও সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লা হারুন।
এর আগে তিনি দুটি শকুন মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বন সংরক্ষণ ও প্রকল্প পরিচালন উপ-প্রধান গবিন্দ রায়, আইইউসিএন কান্ট্রি রিপ্রেজেনটিভ রাকিবুল আমিন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বন সংরক্ষণ, বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ড. মো. মোল্লা রেজাউল করিমসহ অনেকে।
শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, শনিবার হিমালেয়ান ব্রিফিং প্রজাতির শকুন এখান থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। গত এক বছরে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই জাতের মোট ৩২টি শকুন অসুস্থ ও আহত অবস্থায় উদ্ধার করে আনা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে ১৩টি শকুন অবমুক্ত করা হয়।
সূত্রটি আরো জানায়, শকুনগুলো শীত মৌসুমে বিভিন্ন এলাকা থেকে বাংলাদেশে আসে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার ফলে তারা অসুস্থ হয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নামে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব শকুনের পরিণতি হয় মৃত্যু। আর যেগুলো আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, তাদের নিয়ে আসা হয় বীরগঞ্জের সিংড়া ফরেস্টে।
সিংড়া ফরেস্টে শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপনের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখান থেকে প্রতি বছর উদ্ধারকৃত ২০ থেকে ২৫টি শকুন সুস্থ করার পর অবমুক্ত করা হয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লা হারুন বলেন, ‘শকুন বর্তমান সময়ে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী। আমাদের প্রাণীর প্রতি অবশ্যই যত্নশীল হতে হবে। বর্তমানে হিসেবে করলে দেখা যাবে কয়েক প্রজাতির মিলে সর্বোচ্চ আড়াইশ’ থেকে ২৬০টি শকুন বর্তমানে রয়েছে। আমরা যদি যত্নশীল না হই তবে আমরা এই স্বল্প সংখ্যক শকুনগুলোকে হারিয়ে ফেলব।’
শকুনদের চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ভেটেরিনারি বিভাগের চিকিৎসক খাদিজা বেগম বলেন, ‘আমরা সবাই জানি প্রকৃতির ঝাড়ুদার বলা হয় শকুনকে। শকুন বর্তমান সময়ে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী। শকুনই একমাত্র প্রাণী, যা রোগাক্রান্ত মৃত প্রাণী খেয়ে হজম করতে পারে এবং অ্যানথ্রাক্স, যক্ষ্মা, খুরারোগের সংক্রমণ থেকে অবশিষ্ট জীবকূলকে রক্ষা করে। বাংলাদেশে ডাইক্লোফেনাকের বেশি ব্যবহারের কারণে শকুন বিলুপ্তির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।’
শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্রের মুখ্য গবেষক সারওয়ার আলম দিপু জানায়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ ও আইইউসিএন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে সিংড়া জাতীয় উদ্যানে কেন্দ্রটি চালু করা হয়। এরপর থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৪৯টি শকুনকে সুস্থ করে মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হয়। শুধু ২০২১ সালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মোট ৩২টি শকুন এখানে আনা হয়।
মন্তব্য