-->

কেউ খোঁজ রাখে না, অভিমানে গাছের নিচে বসবাস

মো. জিয়াউর রহমান, নেত্রকোনা
কেউ খোঁজ রাখে না, অভিমানে গাছের নিচে বসবাস
গাছের নিচে বেগম আক্তারের সংসার

স্বামী মারা গেছেন ১০ বছর আগে। স্বামীর জায়গা জমি না থাকায় একমাত্র মেয়েকে নিয়ে থাকতেন ভাইয়ের বাড়িতে। সেখানে থেকেই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দারিদ্র্যতার কারণে ওই ভাই তার বসতভিটেটুকু বিক্রি করে বছরখানেক পূর্বে অন্যত্র চলে যান। আর সেই থেকেই গ্রামের রাস্তার পাশে একটি গাছের নিচে একাই সংসার পেতেছেন অসহায় নারী বেগম আক্তার (৪৮)।

গত সাত-আট মাস যাবৎ নেত্রকোনার মদন উপজেলার চানগাঁও ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামের সামনের পাকা রাস্তার পাশে একটি গাছের নিচে বসবাস করে আসছেন ওই নারী। তিনি শাহপুর গ্রামের মৃত উছেন আলীর মেয়ে।

বর্তমানে ওই গাছটির নিচেই রোদ, বৃষ্টি, ঝড় উপেক্ষা করে দিনরাত পার করছেন বেগম আক্তার। এখানেই চলে তার রান্নাবান্না থেকে শুরু করে থাকা-খাওয়া, ঘুমানো ও পয়োনিষ্কাশনের কাজ।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, দীর্ঘদিন আগে একই উপজেলার মাঘান গ্রামের ছাবেদ আলীর সঙ্গে বিয়ে হয় বেগম আক্তারের। স্বামী মারা যান ১০ বছর আগে। দাম্পত্য জীবনে এক কন্যা সন্তান রয়েছে তার। স্বামীর কোনো জায়গা জমি না থাকায় একমাত্র মেয়েটিকে নিয়ে একপর্যায়ে বেগম আক্তার শাহপুর গ্রামের বাবার বাড়িতে চলে যান। সেখানে দীর্ঘদিন বসবাস করেন ভাই রইছ উদ্দিনের বাড়িতে।

গত দুই বছর আগে মেয়েকে বিয়েও দেন তিনি। এরই মধ্যে দারিদ্র্যতার কারণে গত এক বছর আগে ভাই রইছ উদ্দিন তার বসতভিটেটুকু বিক্রি করে পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে যান। তখন থেকে এলাকার বিভিন্ন স্থানে খোলা আকাশের নিচে যাযাবর জীবন কাটছে বেগম আক্তারের। এ অবস্থায় অবশেষে গত সাত-আট মাস যাবৎ শাহপুর গ্রামের সামনের পাকা রাস্তার পাশে একটি গাছের নিচে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন তিনি।

খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে গিয়ে এরই মধ্যে কয়েকবার অসুস্থও হয়েছেন বেগম আক্তার। তার এই মানবেতর জীবনযাপনের দৃশ্য স্থানীয়রা ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে দেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ অসহায় বেগম আক্তারের পাশে ছুটে যান। স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে তার চিকিৎসাও করায় প্রশাসন এবং তাকে পুনর্বাসনের জন্য জায়গাসহ সরকারি ঘর বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু সরকারি ঘরে যেতে নারাজ বেগম আক্তার।

অনেকটা অভিমানের সুরে বেগম আক্তার বলেন, ‘আমার কেউ নাই। একটি মেয়ে ছিল তাকে বিয়ে দিয়েছি। তারপর থেকে সে আমার কোনো খোঁজখবর নেয় না। ভাইও খোঁজ রাখে না। কাউকে আমি বিরক্ত করতে চাই না। তাই কষ্ট হলেও রাস্তার পাশে গাছের নিচেই বাস করছি।’

মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘বেগম আক্তার দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার পাশে বসবাস করছেন। আমি খবর পেয়ে কয়েকদিন তার কাছে গিয়েছি। তার বসবাসের জন্য জায়গাসহ ঘরও দিতে চেয়েছি। কিন্তু তিনি তা নিবেন না। বেশ কয়েকবার অসুস্থ হলে আমি নিজে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করিয়েছি। পরে সুস্থ হয়ে আবার তিনি একই জায়গায় গিয়ে গাছের নিচে বসবাস করছেন। তবুও তার পুনর্বাসনের জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

মন্তব্য

Beta version