-->

রাজশাহীতে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ

তারেক মাহমুদ, রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহীতে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে

তিন দিন আগে ডায়রিয়া আক্রান্ত ১৫ মাসের শিশু তাউসিফকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেছেন মা হিরা বেগম। প্রথম থেকেই তাউসিফের স্যালাইন চলছে। চিকিৎসক দেখার পরে এখন কিছুটা উন্নতি হয়েছে জানালেন মা হিরা বেগম।

এদিকে রামেক হাসপাতালের ১৩ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন পাবনা জেলা থেকে আসা ৫৫ বছর বয়সী বাতের প্রামাণিক। তিনি জানালেন, বাইরের খাবার খেয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যান। সমস্যা বেশি হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি হতে বলেন স্থানীয় চিকিৎসকরা।

শনিবার বেলা সাড়ে ১২ টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মেডিসিন ও শিশু বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা চলছে ওয়ার্ডের বারান্দায়। কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালের বেড সংকট থাকায় ডায়রিয়া রোগীদের বারান্দায় সেবা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে কথা হয় আরো কয়েকজন রোগী-স্বজনদের সঙ্গে। সিংহভাগ রোগী-স্বজন জানালেন বাইরের খাবার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছতায় অসচেতন থাকায় তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রথমে বাসায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে এসেছেন।

হাসপাতালের তথ্য মতে, গত মার্চ মাস থেকেই ডায়রিয়া রোগীদের ভর্তি বেড়েছে; তবে গত ১০ দিন আগে থেকে রোগীদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। গরমের কারণে ডায়রিয়া রোগে তারা আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরাও। তীব্র গরমে রোগীদের সঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন স্বজনরাও।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্য মতে, গত মার্চ মাসে এক হাজার ৬৩৫ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়ে সেবা নিয়েছেন। শনিবার ডায়রিয়ার মোট রোগী ভর্তি ছিল ৮২ জন। যার মধ্যে ৫০ জন ছিল শিশু ওয়ার্ডের রোগী। গত ২৭ মার্চ সর্বোচ্চ মোট ৯৯ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি ছিল এই হাসপাতালে।

শিশু বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, পুরো ওয়ার্ডের বারান্দায় রোগী ভর্তি। পাঁচ বছরের শিশু রাকিবুলকে নিয়ে রাজশাহীর দুর্গাপুর থেকে এসেছেন বাবা রহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, একটু আগে চিকিৎসক পরিদর্শনে এসেছিলেন। নতুন করে ওষুধ লিখে দিয়েছেন। আর স্যালাইন দিতে বলেছেন। আমার বাচ্চা আগের চেয়ে একটু সুস্থ হয়েছে।

এক বছর বয়সী অসুস্থ রিহানকে নিয়ে এসেছেন বাবা তারেক হাসান ও মা রোখসানা বেগম। ছেলেকে পাখা দিয়ে বাতাস করছেন। তারা জানান, তাদের রিহান এখন সুস্থ হয়ে উঠেছে। গত তিন দিন আগে ভর্তি হয়ে প্রথম থেকেই নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ-স্যালাইন চলেছে। রিহান সুস্থ আছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. খান ইসরাত জাহান জানান, এখন ঋতু পরিবর্তনের সময়। প্রতি বছর এই সময় আমাদের হাসপাতালে ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়ে বাচ্চারা ভর্তি হয়। কিন্তু এ বছর গরম বেশি হওয়ায় একটু আগে থেকেই রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৫০ জন বাচ্চা নতুন করে ভর্তি হচ্ছে। আমাদের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুইটি ইউনিটে তাদের চিকিৎসা দিচ্ছি।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বাদশা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে রাজশাহীতে গরম অনেক বেড়েছে। এখন ডায়রিয়া রোগীও বেশি হচ্ছে। মানুষ পিপাসা মেটাতে বাইরের বিভিন্ন শরবত ও খাবার খাচ্ছে। যার বেশিরভাগই ভেজাল। এর ফলে তারা পানিবাহিত ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

তিনি বলেন, প্রথম কথা বাইরের খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সকল খাবার খাওয়ার আগে হাত সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। সকল শাক-সবজি ভালো ভাবে ধুয়ে খেতে হবে। ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে বাসায় স্যালাইন খেতে হবে। অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে। আমাদের চিকিৎসকদের সঙ্গে আমার নিয়মিত কথা হচ্ছে। আমাদের এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা বেডের সমস্যা। বেড না থাকায় ডায়রিয়া রোগীদের ওয়ার্ডের বারান্দায় সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এখানে তো এমনিতেই জায়গার সংকট আছে।

তিনি জানান, আমাদের এখানে একটি ডায়রিয়া কর্নার করা দরকার ছিল। সে বিষয়টি দেখছি। এখন অন্য রোগীদের সঙ্গে এক ওয়ার্ডেই ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা চলছে। প্রতিদিন রোগী আসছে সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় যাচ্ছে।

মন্তব্য

Beta version