-->
শিরোনাম

নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে তরমুজ

কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ
নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে তরমুজ
ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রিজমোড়ে ব্যবসায়ীরা তরমুজ বিক্রি করছেন

রমজান আর চলমান তীব্র তাপদাহকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। এই সুযোগে বিক্রেতাদের মুনাফা বেড়েছে অনেক। যদিও নিম্নমধ্যবিত্ত তো দূরের কথা, মধ্যবিত্তদের অনেকে তরমুজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

একেকটি তরমুজের ওজন ৪ থেকে ৭ কেজি পর্যন্ত। বিক্রেতারা ৭০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করছেন। এতে এক পিস তরমুজের দাম পড়ছে সর্বনিম্ন ২৮০ টাকা থেকে ৪৯০ টাকা।

গত বছরও সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত দামে তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছিল। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্রেতারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিবাদের ঝড় উঠে। এরপর নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অনেক বিক্রেতাদের জরিমানার আওতায় আনা হয়। ফলে কেজি দরে বিক্রি বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি প্রতি পিস তরমুজের দামও কমে যায়।

সরেজমিনে শহরের চরপাড়া ও পাটগুদাম ব্রিজমোড়ে গিয়ে দেখা যায়, শত শত তরমুজ নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। দোকানের পিছনের দিকে ডিজিটাল পাল্লা রাখা হয়েছে। তীব্র গরমে তরমুজের ক্রেতার অভাব নেই। তবে কেজি দরে অতিরিক্ত দাম চাওয়ার কারণে তরমুজ না নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।যদিও বিক্রেতাদের দাবি, বেশি দামে পাইকারি কিনার কারণেই বাধ্য হয়ে কেজি দরে বিক্রি করছেন তারা।

পাটগুদাম ব্রিজমোড়ে তরমুজ বিক্রি করেন তাহের আলী তালুকদার। কেজি দরে বিক্রির কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘খুলনা থেকে পাইকারি দরে কিনে আনি। সেখানে মাঝারি আকারের তরমুজটির দাম পড়ে ২০০ টাকা। ফলে ময়মনসিংহে ওই তরমুজটির দাম পড়ে ৩০০ টাকা। যাতায়াত খরচের বিষয়টি মাথায় রেখে এখানে ৭০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি করছি।’

তিনি বলেন, ‘গতবছর ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। এজন্য গোপনে কেজিতে বিক্রি করছি। এতে লাভের পরিমাণ খুব কম।’

তরমুজ বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, ‘কারও ইচ্ছে হলে পিস হিসেবেও নিতে পারবে। তবে দাম পড়বে ২৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৯০ টাকা পর্যন্ত।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চরপাড়া এলাকার কয়েকজন তরমুজ বিক্রেতারা জানান, দাম বাড়ার পিছনে তাদের কারসাজি নেই। ক্রেতারা দামাদামি করে চলে যাওয়ায় বিক্রি কম হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কম দামে বিক্রি করতে পারছে না তারা।

তবে, বিক্রেতাদের এমন অজুহাতকে উড়িয়ে দিয়েছেন ক্রেতারা। ফয়জুল হক নামে একজন দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘বর্তমানে নিম্নবিত্তদের হাতের নাগালের বাইরে তরমুজ। একজন শ্রমিক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সারাদিনে ৫০০ টাকা রোজগার করলে ২৮০ টাকা দিয়ে তরমুজ কিনবে না। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী তাকে আগে কিনতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি তরমুজ কিনতে গিয়েও ইচ্ছে করেই না কিনে চলে আসছি। এক কেজির দাম ৭০ টাকা। যদি পিস হিসেবেও কিনা হয় তবুও ৭০ টাকা কেজি হিসেবেই দাম পড়ে। বিক্রেতারা সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে।’

ফরহাদ নামে আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘রোজার আগমন আর তীব্র গরমকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের চেষ্টা করছেন। পাইকারিভাবে কত টাকা কিনে, কত টাকা বিক্রি করছে সেটা রশিদ দেখে তদারকি করা প্রয়োজন। এজন্য নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চললে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি বন্ধ হওয়াসহ দাম কমে আসবে।’

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘তরমুজ বিক্রিতে ক্রেতাদের ঠকানো হচ্ছে কিনা আমাদের জানা নেই। দ্রুত অভিযান চালানো হবে। ব্যবসায়ীরা কেজি নাকি পিস হিসেবে তরমুজ কিনেছে ক্রয়ের রশিদ দেখা হবে। যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভের চেয়ে অতিরিক্ত দাম নেয়া হয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

মন্তব্য

Beta version