-->
শিরোনাম

অস্থায়ী তিন শ্রেণিকক্ষে ৬২০ শিক্ষার্থীর পাঠদান

পুলক পুরকায়স্থ, মৌলভীবাজার
অস্থায়ী তিন শ্রেণিকক্ষে ৬২০ শিক্ষার্থীর পাঠদান
মৌলভীবাজার শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ নেই। স্কুল মিলনায়তনে পাঠগ্রহণ করছে শিক্ষার্থীরা

১৫ মাস পূর্বে বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে নেই শ্রেণিকক্ষ। এ কারণে বিদ্যালয়ের মিলনায়তনকে তিন ভাগ করে কোনোরকমে ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা। মৌলভীবাজার জেলা শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত মৌলভীবাজার শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা যায়, পাঠদানের জন্য তিনতলা বিশিষ্ট ভবনের সর্বত্র স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে পলেস্তরা খসে পড়েছে। এ কারণে বিদ্যালয়ের এ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পরিত্যক্ত ঘোষণার পর এক বছর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও নতুন ভবন নির্মাণের নেই কার্যকর কোনো উদ্যোগ। বাধ্য হয়ে ওই বিদ্যালয়ের মিলনায়তনকে টিনসেড ও কাপড় দিয়ে তিন ভাগে গাদাগাদি করে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্বাভাবিক পাঠদানের জন্য প্রয়োজন ১২টি শ্রেণিকক্ষ। সেখানে অস্থায়ী তিনটি শ্রেণিকক্ষে ৬০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে। এতে করে স্বস্তিতে নেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বেঞ্চে দুজনের স্থলে গাদাগাদি করে চার-পাঁচজন শিক্ষার্থীকে বসতে হচ্ছে।

শিক্ষক, ব্যবস্থাপনা কমিটি ও অভিভাবক সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরের শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে পাঠদান বন্ধ আছে। সেই সময়ে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। প্রকৌশল বিভাগ থেকে মৌখিকভাবে এই ভবনটি ব্যবহার না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬২০। প্রাক-প্রাথমিকে আছে ৮৫ জন, প্রথম শ্রেণিতে ১১৫ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৯৯ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৯৭ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১১৮ জন এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ১০৬ জন। দুই বিভাগে এই শিক্ষার্থীদের পাঠদানে প্রয়োজন ১২টি শ্রেণিকক্ষের।

কিন্তু বর্তমানে সকাল ও বিকেল এই দুই পর্বে মাত্র তিনটি শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। সকালে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় এবং বিকেলে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ার পরই এই শ্রেণি সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী প্রাক-প্রাথমিকের ক্লাস মেঝেতে করানোর কথা। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না। শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকায় অন্য শ্রেণির ক্লাসও ওই কক্ষে বেঞ্চ বসিয়ে নিতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুযায়ী শিক্ষক সংকট প্রবল। ৯ জন শিক্ষকের পদ, একটি শূন্য আছে, বর্তমানে ক্লাস নিচ্ছেন ছয়জন শিক্ষক।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক আখলাকুল আম্বিয়া জানান, ক্লাসে ছাত্র সংকুলান করা যায় না। মানসম্মত পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না। বেঞ্চে গাদাগাদি অবস্থা। একদিকে গরম, অন্যদিকে করোনা, খুব কষ্ট হচ্ছে। প্রতি ক্লাসে প্রায় ১০০ ছাত্রছাত্রীকে বর্তমানে পাঠদান চলছে।

অভিভাবক তমাল ফেরদৌস বলেন, ‘এই পরিবেশে কীভাবে বাচ্চাদের লেখাপড়া হয়? আমি আমার সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত। নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে না। এক বেঞ্চে পাঁচজন পর্যন্ত বসছে। পড়ায় কারো মনোযোগ নেই, নেই পড়ার পরিবেশও।’

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে পাঠদান বন্ধ আছে। সেই সময়ে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। প্রকৌশল বিভাগ থেকে মৌখিকভাবে এই ভবনটি ব্যবহার না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাশ্বতী দাস বলেন, ‘ভবনটি ক্লাস করার অযোগ্য। দেয়াল ও ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। বিমে ফাটল। ক্লাসরুম ড্যামেজ। আমরা লিখিতভাবে জানানোর পর প্রকৌশল বিভাগ থেকে সয়েল টেস্ট করা হয়েছে। এরপর আর কিছু হয়নি। ১২টি ক্লাসরুমের জায়গায় মাত্র তিনটি ক্লাসে ৬ শতাধিক ছাত্রছাত্রীকে সামাল দিতে হচ্ছে।’

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শরিফুল ইসলাম জানান, বাচ্চাদের গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে। ছাত্র-শিক্ষক সবার সমস্যা হচ্ছে।স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর মৌলভীবাজার সদর উপজেলা অফিস সূত্র জানায়, ফিজিবিলিটি স্টাডি, সয়েল টেস্ট করে সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের অনুমোদন আসেনি।

মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ইতোমধ্যে সমস্যার কথা জানিয়ে এলজিইডির কাছে আবেদন করা হয়েছে। অনুমোদন এখনো আসেনি। আমাদের মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কিছু জটিলতা থাকায় দেরি হচ্ছে। আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’

মন্তব্য

Beta version