-->
শিরোনাম
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ

ভিটেমাটি হারানোর শঙ্কায় উপকূলবাসী

শামিম আশরাফ শেলী, খুলনা
ভিটেমাটি হারানোর শঙ্কায় উপকূলবাসী
ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ

ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের কারণে ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় মানুষের। দাকোপ উপজেলার ৩২ নম্বও পোল্ডারের কামারখোলা ও সুতারখালী ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ এই আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে। এজন্য দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারের দাবি এসব এলাকার মানুষের।জানা যায়, জোয়ারের সময় ঢাকী নদীর তীব্র স্রোতের তোড়ে কামারখোলার হাটখোলা গেটসংলগ্ন প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় বেড়িবাঁধে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। সিডর-আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বস্বান্ত মানুষ বহু কষ্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু আবারো এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘরসহ বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত লবণপানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছে।জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতবিক্ষত সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদ। একদিকে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আরেকদিকে লবণপানির চিংড়িচাষে উপকূলের মানুষের জীবন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ।

এ রকম অবস্থায় ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দাকোপের কামারখোলা ও সুতারখালী ইউনিয়নের বাড়িঘর বিধ্বস্থসহ লবণপানিতে তলিয়ে যায় ফসলের ক্ষেত। প্রাথমিকভাবে আইলার ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব পড়ে ভয়ঙ্করভাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে অনেক মানুষ ছাড়তে বাধ্য হন উপকূল, নিজেদের ভিটেমাটি।

এদিকে উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধের ভাঙন প্রতিরোধে বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ‘উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প প্রথম পর্যায়’ গ্রহণ করে ২০১৩ সালে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত উপকূলীয় জেলাগুলো হচ্ছে খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরগুনা, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী।

সূত্রমতে, উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের উপকৃত এলাকা হচ্ছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫০ এশর এবং সেচ সুবিধাভুক্ত এলাকা হচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজার ১৫৭ একর। এ ছাড়া বাঁধ নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ ৪১২ কিলোমিটার, নিষ্কাশন খাল খনন ও পুনর্খনন ৩০৬ কিলোমিটার, পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো নির্মাণ ৮৯টি, ফ্লাসিং ইনলেট নির্মাণ ৮১টি, বাঁধের ঢাল প্রতিরক্ষা কাজ ২৯ কিলোমিটার, নদীতীর সংরক্ষণ কাজ ১৪ কিলোমিটার ও বনায়ন ১ হাজার ৭২৯ একর। কিন্তু এ প্রকল্পের অনেকটাই এখনো অসমাপ্ত রয়েছে।

তবে স্থানীয়রা জানান, সুন্দরবনসংলগ্ন দাকোপ উপজেলার ৩২ নম্বও পোল্ডারের কামারখোলা ও সুতারখালী ইউনিয়নের ঢাকী, শিবসা ও ভদ্রা নদীর তীরে বাঁধ দেওয়ায় এই এলাকার নদনদী থেকে কৃষিজমিতে লবণপানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে কামারখোলা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় তরমুজ চাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া লবণপানির প্রকোপ না থাকার কারণে তরমুজের ফলন উঠে যাওয়ার পর মানুষ আমন ধান ও রবিশস্য চাষ করছেন। যা কয়েক বছর আগেও ছিল তাদের কাছে স্বপ্নের মতো।

কামারখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পঞ্চানন কুমার মণ্ডল বলেন, ‘ঢাকী নদীর তীরে বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ দিয়ে ডাম্পিং করা হয়েছে। তারপরও ভাঙনরোধ করা সম্ভব হয়নি। নদীর জোয়ারের তোড়ে এই ভাঙন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।’তিনি আরো বলেন, ‘ইতোমধ্যে কামারখোলা, জালিয়াখালী, কালাবগী, সুতারখালীতে নবনির্মিত বেড়িবাঁধের অনেক স্থানে আংশিক ও সম্পূর্ণ বাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখনই জিও ব্যাগ দিয়ে ডাম্পিং করা না হলে স্বপ্নের বেড়িবাঁধ মানুষের কোনো কাজে আসবে না।’

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী গোপাল কুমার দত্ত বলেন, ‘৩২ নম্বও পোল্ডারটি কোস্টাল এনভায়রনমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (সিআইপি) অধীনে। এই প্রজেক্টটি বিশ্বব্যাংকের। এখনো আমাদের কাছে এই পোল্ডারটি দেওয়া হয়নি। এই কারণে আমাদের কাছে এই পোল্ডারের বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই।’

 

মন্তব্য

Beta version