-->
শিরোনাম

হাওরে বাড়ছে পানি, কাঁচা ধান ঘরে তুলছে কৃষক

মো. জিয়াউর রহমান, নেত্রকোনা
হাওরে বাড়ছে পানি, কাঁচা ধান ঘরে তুলছে কৃষক
কাঁচা ধান কাটছে কৃষকরা

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে একটানা কয়েকদিন বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে হাওরপাড়ের কৃষকদের ফসল হারানোর আশঙ্কাও।

বিশেষ করে জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদীর পানি আগের তুলনায় আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের হাওরগুলোতে থাকা কাঁচা ধান কাটতে শুরু করেছে কৃষকরা।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, খালিয়াজুরী উপজেলার নিম্নাঞ্চল কীর্তনখোলা, লক্ষ্মীপুর, চুনাই, বাইদ্যারচর, কাটকাইলের কান্দা, টাকটার, মনিজান, লেবরিয়া, হেমনগর, গঙ্গাবদর, নয়াখাল, বাগানী, বৈলং ও ডাকাতখালী হাওরের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে ধানের ক্ষতি হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) খালিয়াজুরীতে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাওর এলাকার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে পানিতে ডুবে যাওয়া কাঁচা ধান কেটে কিছু পরিমাণ হলেও ঘরে তোলার চেষ্টা করছে কৃষকরা।

খালিয়াজুরী সদরের লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, যদি আরো তিন-চার দিন এভাবে পানি বাড়তে থাকে তাহলে সমস্ত ফসল তলিয়ে যাবে। এই জমিগুলোর ধান পাকতে আরো ১০-১৫ দিন দরকার ছিল। কিন্তু এখন নিরুপায় হয়ে ধান কেটে ফেলতে হচ্ছে। এতে ধান না হোক অন্তত গরুর খাবারটা সংগ্রহ করা যাবে।

গত সোমবার নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় প্রদেশের চেরাপুঞ্জিতে ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও সুরমা নদী দিয়ে নেমে খালিয়াজুরী পয়েন্টে ধনু নদীর পানি বেড়েছে ১০ সেন্টিমিটার। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ধনু নদীর পানি বিপৎসীমার মাত্র ৫৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

তিনি বলেন, ‘আমাদের শেষ ভরসা হচ্ছে ফসল রক্ষা বাঁধ। নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে ১৮৩ কিলোমিটার বাঁধের কোনো অংশ এখনও ভাঙেনি। আমরা বাঁশ এবং জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধগুলো আরো মজবুত করার চেষ্টা করছি।’

খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের হিসাবে এ উপজেলায় ২১ হাজার ১২০ হেক্টর জমির মধ্যে এখন পর্যন্ত প্লাবিত জমির পরিমাণ ১১৩ হেক্টর। এর মধ্যে ২০-২৫ হেক্টর জমির ধান কাটতে পেরেছে কৃষকরা। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোনো জমি প্লাবিত হয়নি।’

খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘পানি বৃদ্ধির কারণে হাওরের কিছু এলাকায় আগাম জাতের ধান (ব্রি-২৮) কাটা শুরু হয়েছে। তবে পুরোদমে কাটা-মাড়াই শুরুর সময় আরো ১০-১৫ দিন পর। হঠাৎ পাহাড়ি ঢল আসায় আমরা অনেকটা আতঙ্কিত।’

তবে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এলাকার কৃষকদের ফসল রক্ষায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন এবং ফসল রক্ষা বাঁধগুলো সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণ করছেন বলেও জানান ইউএনও।

এদিকে জেলার হাওর উপজেলা মোহনগঞ্জ, মদন ও কেন্দুয়ার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ ও কৃষকদের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস।

মন্তব্য

Beta version