-->
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

রাবি ও কুবি হলে বেড়েছে খাবারের দাম, বাড়েনি মান

তারেক মাহমুদ, রাজশাহী ব্যুরো ও মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা
রাবি ও কুবি হলে বেড়েছে খাবারের দাম, বাড়েনি মান

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) হলগুলোর ডাইনিংয়ে খাবারের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাজারমূল্যর সঙ্গে খাবারের দামের সামাঞ্জস্য করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। তবে খাবারের দাম বাড়লেও এর গুণগত মান নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রোজায় যেমন প্রোটিন ও পর্যাপ্ত আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত তেমন খাবার দেওয়া হচ্ছে না বলে তারা অভিযোগ করেন।

রাজশাহী প্রতিনিধির পাঠানো সংবাদ

রমজান মাসে রাবি’র হলগুলোর ডাইনিংয়ে খাবারের দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে, এই মূল্য শুধু রমজান পর্যন্তই কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

কিন্তু খাবারের দাম বাড়লেও মান বাড়েনি বলে অভিযোগ করছেন অধিকাংশ হলের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, হলে খাবারের মান বাড়ানোর নামে শুধু টাকার মানটাই বাড়ানো হয়েছে।

তবে মেয়েদের হলগুলোতে খাবারের মান মোটামুটি ঠিকই আছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও জানা গেছে, মেয়েদের একটি হলের ডাইনিং রমজান উপলক্ষে বন্ধ আছে। আরেকটি হলের ডাইনিংয়ে সেহরির খাবার রান্না হচ্ছে না। তাছাড়া ছেলেদের হল ডাইনিংয়ের খাবারের দামের তুলনায় মেয়েদের হলে দাম কিছুটা বেশি।

খাবারের দাম বাড়ানো বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী হলে নিয়মিত খেতে যাওয়া আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, যে অনুপাতে খাবারের দাম বাড়ানো হয়েছে সে অনুপাতে মান বাড়ানো হয়নি। রাতের ও সেহরির খাবারের দাম মিলিয়ে আগের তুলনায় ১২ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

কিন্তু আগে যে আইটেমগুলো দেওয়া হতো তার সঙ্গে বর্তমান আইটেমের খুব বেশি পার্থক্য নেই। ডিম ভাজির পরিবর্তে এখন সিদ্ধ ডিম দেওয়া হচ্ছে - এই সিদ্ধান্তটা ইতিবাচক বলে মনে করেন তিনি। অতিরিক্ত আইটেম হিসেবে যে ডাল দেওয়া হচ্ছে সেটাকে পর্যাপ্ত মনে হয়নি তার। তাছাড়া ভাতের গুণগত মান কিছুটা বাড়ানো উচিত বলে তিনি মনে করেন।

ইলিয়াস হোসাইন নামে শাহ মাখদুম হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী ‘রাবি পরিবার’ নামে ফেসবুক গ্রুপে এক পোস্টে বলেন, নবাব আ. লতিফ হলে খেতে গিয়ে বুঝলাম, হলে খাবারের মান বাড়ানোর নামে শুধু টাকার মানটাই বাড়ানো হয়েছে। আমাদের শাহ মাখদুম হলেও একই অবস্থা। কামানের গোলার মতো ভাত, সবজিটাও বিদঘুটে। কর্মরত লোকদের বলেও কোন উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। খাবারের মান বৃদ্ধির জন্য যে বাড়তি টাকাটা নেওয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণ অনুচিত।

রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোহসিনা শাফি বলেন, রমজানের আগে রাতে ২০ ও দুপুরের খাবারের দাম ২৫ টাকা করে নেওয়া হতো। এখন রাতে ২৫ ও সেহরিতে ৩০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। মোট ১০ টাকা দাম বেড়েছে। কিন্তু খাবারের মান আগের তুলনায় খুব একটা বাড়েনি।

দাম বাড়ানো বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক ড. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রমজান মাসে শিক্ষার্থীদের একটু ভালো মানের খাবারের ব্যবস্থা এবং বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য করতেই খাবারের দাম কিছুটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখন শিক্ষার্থীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের আসলে কিছু করার নাই। কারণ, বর্তমানে সবকিছুরই দাম বেশি। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার জায়গাটাও কিছুটা বড়। আমরা হয়তোবা শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার জায়গাটা সম্পূর্ণ করতে পারছি না।’

মেয়েদের হলগুলোর ডাইনিংয়ে খাবারের দাম ছেলেদের হলের তুলনায় বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে, তিনি আরো বলেন, ‘মেয়েদের হলের মধ্যে মন্নুজান ও রোকেয়া হল ছাড়া, বাকি হলগুলোতে ডাইনিং নাই। ওইগুলোতে চুক্তি ভিত্তিতে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। তাই রোকেয়া ও মন্নুজান হল বাদে বাকিগুলোতে দাম কিছুটা বেশি।’

কুমিল্লা প্রতিনিধির পাঠানো সংবাদ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া ও বিভিন্ন হলের ডাইনিংয়ে খাবারের মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। খাবারের দাম বাড়লেও মান বাড়েনি বলে তারা অভিযোগ করেন।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, রোজায় যেমন প্রোটিন ও পর্যাপ্ত আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত তেমন খাবার দেওয়া হচ্ছে না।

সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু হলের ডাইনিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, আগে যে খাবার ৩৫ টাকা ছিল সে খাবারের সঙ্গে শুধু একটা ডিম দিয়েই রাখা হচ্ছে ৬০ টাকা।

শিক্ষার্থীরা জানান, রমজান মাসে হলের বাইরে গিয়ে সেহরি করা কষ্টের। এছাড়াও বাইরে সেহরি করলে খরচ বেশি। সব শিক্ষার্থীদের পক্ষে তা সম্ভব না। নায্যমূল্য হলেই ভালো মানের খাবারের ব্যবস্থা করা উচিত।

বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বলেন, হলের খাবারের দাম অনেক বেশি। অন্য সময়ের ৩৫ টাকার মিলের সঙ্গে নামমাত্র আইটেম যোগ করে সেহরিতে ৬০ টাকা রাখা হচ্ছে। দাম বেশি নেওয়া হলেও খাবারের মানের কোনো উন্নয়ন হয়নি। হল থেকে যে খাবার খাই তা বড়জোড় ৪০-৪৫ টাকা দাম হওয়া উচিত।

দত্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইকবাল হাসান জানান, দিনভর রোজা রেখে ক্যাফেটেরিয়াতে খেতে যান তিনি। কিন্তু ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান প্রত্যাশা অনুযায়ী তিনি পাচ্ছেন না। খাবারের মান আরো বৃদ্ধি করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

পুষ্টিবিদ আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২৭০ থেকে ৪৫০ গ্রাম চাল, আটা, ভুট্টার তৈরি খাবার খাওয়া উচিত। এর সঙ্গে ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রাম শাকসবজি এবং ১৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম মাছ, মাংস, ডিম খেতে হবে। রমজানে তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।’

বঙ্গবন্ধু হলের ম্যাচ ম্যানেজার ১০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ওসমান ফারুক বলেন, ‘খাবারের মানে সমস্যা নেই। তবে দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি না হলে ৬০ টাকার খাবারটা শিক্ষার্থীরা ৫০ টাকায় খেতে পারতো।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘বিষয়টি আগে জানতাম না। এ বিষয়ে হল প্রভোস্টদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হয় এমন সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে।’

মন্তব্য

Beta version