ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টির কারণে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে নেত্রকোনার হাওর ও নদীগুলোর পানি।
এ অবস্থায় জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদের পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধির ফলে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ কীর্তনখলা ফসল রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের আশঙ্কা, যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যেতে পারে হাওরের কয়েক হাজার একর বোরো জমি।
তাই কৃষকরা স্বেচ্ছায় দিনরাত পরিশ্রম করে ওই ফাটল ধরা ফসল রক্ষা বাঁধে কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছে জেলা প্রশাসন, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা কৃষি বিভাগ, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা কৃষি বিভাগসহ জনপ্রতিনিধিরা।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে কীর্তনখলা ফসল রক্ষা বাঁধে সরজমিনে গেলে স্থানীয় কৃষকসহ সংশ্লিষ্টদের বাঁধ রক্ষার কাজ চোখে পড়ে।
সমস্যা দেখা দিলে শুরু হয় মেরামত
তবে কৃষকরা স্থায়ী ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে বলেন, যখন বাঁধে সমস্যা দেখা দেয় তখন তড়িঘড়ি করে মেরামত করা হয়। এর আগে কারো খবর থাকে না। ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে নানা রকম অনিয়মেরও অভিযোগ করেন স্থানীয় কৃষকরা।
স্থানীয় চাকুয়া গ্রামের কৃষক মৃদুল মিয়া বলেন, ‘যেভাবে বাঁধ নির্মাণ করার কথা সেভাবে কাজ হয়নি। এখন ফসল ঘরে তোলার সময়। এমন সময় পানি বাড়ছে।
‘বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছ। কিন্তু পিআইসির কোনো লোকজনকে আমরা পাচ্ছি না। তাই আমাদের ফসল রক্ষা করতে রাতের ঘুম হারাম করে খেয়ে না খেয়ে আমরা নিজেরাই দিনরাত কাজ করছি। তবুও শেষ রক্ষা হয় কি না বলতে পারছি না', বলেন মৃদুল মিয়া।
এদিকে পানি বাড়তে দেখে ফসল হারানোর ভয়ে হাওরের আধা ও কাচা ধান কেটে ফেলছেন অনেক কৃষক। কীর্তনখলা ফসল রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন হাওরের জমির কাচা ধান কেটে নেওয়া কৃষক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি ভোরের আকাশের কাছে নিজের আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
‘এই ধান দিয়ে আমাদের সারা বছরের খোরাক চলে। কিন্তু বাঁধের যে অবস্থা যেকোনো সময় ভেঙে পানিতে ফসল তলিয়ে যেতে পারে। তাই ভয়ে কাচা অবস্থাতেই ধান কেটে ফেলছি।’
‘সব হারানোর চেয়ে অল্প কিছু ধানও যদি পাই তাহলে অন্তত কিছুটা হলেও প্রাণে বাঁচব’, যোগ করেন রফিকুল ইসলাম।
তলিয়ে গেছে ১১৩ হেক্টর জমির বোরো ধান
এরই মধ্যে উপজেলার ধনু নদ সংলগ্ন চুনাই হাওরসহ কয়েকটি হাওরের নিম্নাঞ্চলের ১১৩ হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী মদন উপজেলার তলার হাওরের ১০ হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বলে জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফ এম মোবারক আলী বলেন, ‘জেলায় এ বছর এক লাখ ৮৬ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র হাওরাঞ্চলে বোরোর আবাদ হয়েছে ৪০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে।
‘উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ধনু নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এরই মধ্যে খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার ১৩৩ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে খালিয়াজুরীতে ১১৩ হেক্টর ও মদনে ১০ হেক্টর বোরো জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’
জেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষকদের ফসল রক্ষাসহ তাদের মঙ্গলার্থে সব ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এল এম সৈকত বলেন, কীর্তনখলা বাঁধে একটু সমস্যা হয়েছে। তাই আমরা স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে চেষ্টা করছি তাদের সোনালী ফসল রক্ষা করতে।
বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ধনু নদের পানি প্রবাহিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে এখনও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। হাওরের নিম্নাঞ্চলের কিছু জমি পানিতে নিমজ্জিত হলেও মূল হাওর এখন পর্যন্ত অক্ষত আছে।
মন্তব্য