পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু উৎসব শুরু হয়েছে। পাহাড়ে বসবাসরত ১৩টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের প্রধান সামাজিক উৎসব এটি। করোনার কারণে গেল দুটি বছর পাহাড়ে বৈসুক-সাংগ্রাই-বিজু-বিষু উৎসব করতে পারেনি পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। পরিস্থিতি তুলনামূলক কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় এবার বর্ণাঢ্য আয়োজনে উৎসব হচ্ছে পাহাড়ে।
বাংলা পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে পাহাড়িরা ১৫ দিনব্যাপী উৎসব করে থাকে। মূল উৎসব হয় ৩০ চৈত্র। ১২ এপ্রিল কাপ্তাই হ্রদে ভাসানো হবে ফুল। আগামী ১৬ এপ্রিল রাঙামাটির কাউখালীর বেতবুনিয়ায় জলকেলি উৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাহাড়ের এ বর্ণিল উৎসব।
রাঙামাটি জেলা পরিষদ ও জেলা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ৪ থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করেছে। এরপর বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠানমালা আয়োজন করবে। মেলায় প্রতিদিন বিকাল ৪ রাত ৯ পর্যন্ত এ মেলা চলবে।
মেলায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও ব্যবহার্য পোশাকের ৫০টি স্টল বসেছে। এছাড়া রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিটিউটে প্রতিদিন বিকাল থেকে শুরু হচ্ছে ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মেলা উপলক্ষে সোমবার বিকেলে রাঙামাটি সরকারি কলেজ গেট থেকে বৈসাবির আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। র্যালিটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে এসে ফিতা কেটে, বেলুন উড়িয়ে এ উৎসবের সূচনা করা হয়। শোভাযাত্রায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর ঐতিহ্যবাহী পোশাক, বাদ্যযন্ত্র, বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে নানা বয়সের পাহাড়ি মানুষ অংশ নেয়। পরে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাহাড়ি শিল্পীরা বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পরিবেশন উপস্থাপন করেন।
সোমবার রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিটিউ প্রাঙ্গণে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। এরপর পরই নাচে গানে মেতে উঠেন পাহাড়ি শিল্পীরা। পাহাড়িদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে সমতল থেকে আসা মানুষও যোগ দিয়েছে এ উৎসবে। উদ্বোধনী দিনের আয়োজন ছিল শোভাযাত্রা, ডিসপ্লে নৃত্য, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ইমতাজ উদ্দিন, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন। আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন, রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য অংসুই ছাইন চৌধুরী, রেমলিয়ানা পাংখোয়া, মুছা মাতব্বর, এড দীননাথ তঞ্চঙ্গ্যা, রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক রুনেল চাকমা।
মন্তব্য