-->
শিরোনাম

আলো ছড়াচ্ছে সেতুবন্ধ পাঠাগার

শরিফুল ইসলাম, নীলফামারী
আলো ছড়াচ্ছে সেতুবন্ধ পাঠাগার
আলো ছড়াচ্ছে সেতুবন্ধ পাঠাগার

নীলফামারীর সৈয়দপুরের খাতা মধুপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম খালিশা বেলপুকুর। শিক্ষার আলো থেকে অনেকটা দূরে গ্রামটির মানুষজন। তবে ধীরে ধীরে শিক্ষার আলোর দিশারী হচ্ছেন তারা। তবে পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বই পড়া থেকে গ্রামাঞ্চলের শিশু-কিশোররা এক প্রকার বঞ্চিত। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে শিশু-কিশোরদের হাতে বই তুলে দিতে ওই গ্রামে গড়ে উঠেছে সেতুবন্ধ পাঠাগার।

পাখি ও প্রকৃতি সুরক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেতুবন্ধের উদ্যোগে ২০১৭ সালে গড়ে উঠেছে এ পাঠাগার। এ পাঠাগারকে ঘিরে এখন বই পড়ার আনন্দে মেতেছে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা।

তিন শতক জমির ওপর টিনের ছাউনির এ পাঠাগারে শোভা পেয়েছে দুই সহস্রাধিক বই। ধর্মীয়, সাহিত্য ও বিজ্ঞানসম্মত এসব বই দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রহ করে আসছে সেতুবন্ধ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। শুরুতে এর পাঠক সংখ্যা হাতেগোনা হলেও বর্তমানে প্রায় ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়মিত আসা-যাওয়া করছে এই পাঠাগারে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাঠাগারের প্রতিটি খাপে সাজানো আছে হরেক রকম বই। লাইব্রেরির এক পাশে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। পছন্দের বই বসে পড়ার জন্য আছে সারিবদ্ধ চেয়ার-টেবিল।

পাঠাগারে সেলফে গাদাগাদি করে সাজানো হরেক রকম বই। তাই পছন্দের বই খুঁজে পেতে অবশ্য একটু বেগ পেতে হয় বইপ্রেমীদের। পাশাপাশি তিনটি টেবিল একসঙ্গে লাগানো। আর চারপাশ দিয়ে প্লাস্টিকের চেয়ার রাখা হয়েছে। সেখানে বসেই পছন্দের বই পাঠে মগ্ন পাঠকরা।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য পাঠাগারটি খোলা থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরতির সময়। এ সময় শিক্ষার্থীরা পাঠাগারে এসে বই পড়ে। বাড়িতেও পড়ার জন্য বই নিয়ে যায়। সব মিলিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই পাঠাগারটি বইয়ের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বন্ধন আরো দৃঢ় করেছে।

সেতুবন্ধ পাঠাগারে নিয়মিত পত্রিকা পড়ারও ব্যবস্থা আছে। প্রতিদিন জাতীয়-স্থানীয় একাধিক পত্রিকা রাখা হয়। ফলে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থী ও পাঠকরা খুব সহজেই দেশ-বিদেশের খবরাখবর পেতে পারে। এ ছাড়াও সেতুবন্ধ পাঠাগারে নিয়মিত কবিতা চর্চা, সাহিত্য সভা ও মাসিক গল্প লেখা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

সেতুবন্ধ পাঠাগারে নিয়মিত বই পড়তে আসা স্কুলছাত্রী জুই বলে, ‘এখানে আমরা ছড়া ও গল্পের বই পড়ি। পাশাপাশি পত্রিকার মাধ্যমে বিভিন্ন খবরাখবরও জানতে পারি। সেতুবন্ধ পাঠাগার নির্মাণ হওয়ায় আমরা শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হয়েছি।’

ময়দানপুর গ্রামের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া বলে, ‘স্কুল ছুটির পর নিয়মিত এখানে বসে পছন্দের বই পড়ি, ছোটগল্পের বই পড়ে অনেক ভালো লাগে।’

সেতুবন্ধ পাঠাগারের আরেক নিয়মিত পাঠক সুজন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন অবসর সময়টা পাঠাগারে বিভিন্ন শিশুতোষ ছড়া ও গল্পের বই পড়ে কাটাই।’

পাঠাগারটির প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা এই পাঠাগারের মাধ্যমে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। গ্রামাঞ্চলের পাঠকদের পর্যাপ্ত বই পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এ জন্য আমরা প্রচুর পরিমাণে বইয়ের সমাহার ঘটাতে চাই। আমাদের পাঠাগারকে একটি আদর্শ পাঠাগারে রূপ দিতে চাই। এ জন্য আমাদের সবার কাছে সহযোগিতা কাম্য।’

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম হুসাইন বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেতুবন্ধের কার্যক্রম বরাবরই প্রশংসনীয়। সেতুবন্ধ পাঠাগার এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সেতুবন্ধের স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমে সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করবে।’

মন্তব্য

Beta version