-->
শিরোনাম

পায়রার ডানায় ভর করছে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন

জহির রায়হান, বরিশাল ব্যুরো
পায়রার ডানায় ভর করছে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন
পায়রাবন্দরের সঙ্গে আরো ১৮ থেকে ২০টি সমন্বিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দিনরাত সমানে চলছে নানা কর্মযজ্ঞ।

বরিশাল বিভাগ তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে দেশের গভীরতম পায়রা সমুদ্রবন্দর। আর পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ঘিরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার।

পায়রাবন্দরের সঙ্গে আরো ১৮ থেকে ২০টি সমন্বিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দিনরাত সমানে চলছে নানা কর্মযজ্ঞ। এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে উন্নয়নের মহাসড়কে সমানতালে চলবে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের চাকা। স্বাবলম্বী হবে এখানকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন, গড়ে উঠবে অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্প কল-কারখানা। পাশাপাশি পায়রার বহুমুখী উন্নয়নে একসময়ের কৃষি ও মৎস্যনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলে আসবে জীবন-জীবিকায় পরিবর্তন।

পায়রা সমুদ্রবন্দর সূত্রে জানা গেছে, দেশে শতভাগ বিদ্যুৎ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পটুয়াখালীর পায়রায় এসে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের ২৪ অক্টোবর বরিশাল-পটুয়াখালী ও কুয়াকাটা মহাসড়কে লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর দৃষ্টিনন্দন ফোর লেন পায়রা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পায়রা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে মাওয়া থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ফেরিবিহীন যোগাযোগ শুরু হয়েছে।

আরো জানা গেছে, সাবমেরিন কেব্্ল ল্যান্ডিং স্টেশন, শেরে বাংলা নৌ-ঘাঁটি, পায়রা সেতুর উত্তর প্রান্তে স্থাপিত হয়েছে শেখ হাসিনা সেনানিবাস। দক্ষিণপ্রান্ত দুমকীতে রয়েছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। মহাসড়কের পাশে রয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র,

ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয় ও মালিকানার উদ্যোগে গার্মেন্ট শিল্প এলাকা, কয়লা ও জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার, বিমানবন্দর স্থাপন, রেল সংযোগ, জাহাজ নির্মাণ ও মেরামত শিল্প, ট্যুরিজম, লিকুইড বাল্ক টার্মিনাল ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ।

এ ছাড়াও সাগরকন্যা কুয়াকাটায় এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল-মোটেল এবং খাজুরা, গঙ্গামতী, কাউয়ারচর ও এর আশপাশের এলাকায় শিল্প-কলকারখানা ও বহুতল ভবন। কুয়াকাটায় নির্মাণের অপেক্ষায় রয়েছে ১৭ তলা ভবনের ওয়াচ টাওয়ার। পাশাপাশি মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় কুয়াকাটায় হবে এয়ারপোর্ট, স্টেডিয়ামসহ বহু স্থাপনা।

পাশাপাশি পটুয়াখালী-কলাপাড়া মহাসড়ক থেকে পায়রাবন্দর পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার ফোর লেন সড়ক নির্মাণ, মহাসড়ক থেকে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ছয় লেনের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে।

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইপিজেড স্থাপনের জন্য পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পচাকোড়ালিয়া মৌজায় ৪১০ দশমিক ৭৮ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য চার ধারায় নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের ক্লাবের (ইনভেস্টর ক্লাব) জন্য কুয়াকাটা মৌজায় দুই দশমিক ২৫ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।

আরো জানা গেছে, আগামী ২০ বছরের মহাপরিকল্পনা নিয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, গলাচিপা, কলাপাড়া এবং বরগুনা সদর, তালতলী, আমতলী ও পাথরঘাটা উপজেলায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আধুনিক পর্যটন স্থাপনা, শিল্পভিত্তিক বন্দরনগরী, পরিকল্পিত নগরায়ণ, যোগাযোগ, অর্থনীতি ও কৃষি খাতে উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা ও দুর্যোগঝুঁকিসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান করতে যাচ্ছে সরকার।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরিফ জানান, পায়রা সেতু, পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের পর এখন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার অপেক্ষায় আছে দক্ষিণাঞ্চলবাসী। পদ্মা সেতু চালু হলে সারা দেশের পর্যটকরা পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার মধ্যে সাগরকন্যা কুয়াকাটায় পৌঁছাতে পারবেন। স্বল্পসময়ে কুয়াকাটায় আসতে উৎসাহিত হবেন পর্যটকরা। পর্যটন এলাকায় বিনিয়োগকারীরা তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাবেন।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস জানান, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্ধোধনের ফলে প্রান্তিক দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিকশিত হচ্ছে। আবার পদ্মা সেতু চালু হবে। আর এটা হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে।

তিনি বলেন, পায়রার নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি বদলে যাবে অনগ্রসর এলাকার মানুষের জীবনযাত্রাও। বরিশাল চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়ন হওয়ার ক্ষেত্রে যে বাধা ছিল তা পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর মাধ্যমে কেটে গেছে। এখন অনেক বড় শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে।পায়রাবন্দরকেন্দ্রিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হোক সেটাই এখন দাবি।

পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘পায়রা সমুদ্রবন্দর দক্ষিণাঞ্চলের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। পায়রাবন্দর মাত্র যাত্রা করেছে। প্রতি মুহূর্তেই বন্দরের সক্ষমতা বাড়াচ্ছি আমরা। এ বন্দরকে আমরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত করতে পারব। এখনো এ বন্দরের অধিকাংশ অবকাঠামোগত নির্মাণ চলমান রয়েছে। এগুলোর কাজ শেষ হলে দক্ষিণাঞ্চল পুরোপুরি অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হবে।’

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার আমিন-উল-আহসান জানান, পায়রাবন্দরের সঙ্গে আরো ১৮ থেকে ২০টি সমন্বিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দিনরাত সমানে চলছে নানা কর্মযজ্ঞ। এ অঞ্চলে আরো অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। বিশেষ করে পায়রা তাপবিদ্যুৎ ও বন্দরকে কেন্দ্র করে মানুষের জীবনমানের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। সামনে আরো পরিবর্তন আসবে। একইসঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগও আসছে।

মন্তব্য

Beta version