-->
শিরোনাম

ঋণ নিয়ে বিপাকে রেণুপোনা চাষিরা

এইচ আর তুহিন, যশোর ব্যুরো
ঋণ নিয়ে বিপাকে রেণুপোনা চাষিরা

করোনাভাইরাসকালে সরকারের প্রণোদনা ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন যশোরের রেণুপোনা হ্যাচারি মালিকরা। ঋণের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার কারণে এখন তাদেরকে নিয়মিত ঋণের সুদ টানতে হচ্ছে। যেখানে প্রণোদনার ঋণের সুদ হার ছিল ৪ শতাংশ, সেখানে এখন সুদ হার দিতে হচ্ছে ১২ শতাংশ। এছাড়া খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, উচ্চ রেটে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ ও পোনার দাম কমে যাওয়ায় চরম বিপর্যয়ে রেণুপোনা উদ্যোক্তারা।

হ্যাচারি মালিকরা জানান, করোনাভাইরাসের প্রভাবে যশোরে ২০২১ সালে ৩৪টি মৎস্য হ্যাচারি বন্ধ হয়ে যায়। ওই বছর উৎপাদনে যেতে না পারায় রেণুপোনা খাতের উদ্যোক্তাদের প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছর পুরোদমে উৎপাদনে ফিরেছেন রেণু চাষিরা। এবার রেণুপোনা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দেড় লাখ কেজি।

মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত রেণুপোনা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। দেশের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ রেণুপোনা যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়। চাঁচড়া মৎস্যপল্লীর ৩৪টি হ্যাচারিতে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার কেজি রেণু উৎপন্ন হয়।

যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ও ফাতিমা হ্যাচারির মালিক ফিরোজ খান বলেন, ‘করোনাকালে সরকারের প্রণোদনার ঋণ নিয়েছিলাম ১৪ লাখ টাকা। যার সুদ ছিল ৪ শতাংশ। মেয়াদ ছিল এক বছর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় এখন নিয়মিত ঋণের সুদ দিতে হচ্ছে। এভাবে আমাদের রেণুপোনা খাতের অর্ধেক উদ্যোক্তা বিপাকে পড়েছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘এছাড়া শিল্প রেটে আমাদের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। বারবার আমরা দাবি করছি, বিদ্যুৎ বিল কৃষি রেটে করা হোক। সেটি কার্যকর হচ্ছে না। এতে পিছিয়ে পড়ছি আমরা। কারণ পোনার দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। আবার খাদ্যের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে চরম বিপর্যয়ের মধ্যে রেণুপোনা খাতের ব্যবসায়ীরা।’

ফিরোজ খান বলেন, ‘উৎপাদনে গেলেও আমরা বিদ্যুৎ বিল ও পোনার হরমন ইনজেকশন পিজি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আগে আমরা বিদ্যুৎ বিল দিতাম কৃষিতে। এখন সেখানে দিতে হচ্ছে শিল্পরেটে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। এছাড়া মাছের হরমন ইনজেকশন পিজি আগে প্রতি পিস ছিল ৮ টাকা, সেখানে এখন কিনতে হচ্ছে ৪০ টাকায়।’

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, রেণুপোনা উৎপাদনে যশোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জেলায় ৩৪টি হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন হচ্ছে। এরমধ্যে কার্প জাতীয় রেণুপোনা উৎপাদন ৬৪ দশমিক ৮৬ টন। জেলায় রেণুপোনার চাহিদা ১৫ দশমিক ২৩ টন। উদ্বৃত্ত ৪৯ দশমিক ৬৩ টন দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।

তেলাপিয়া পোনা ১০১ দশমিক ৪০ মিলিয়ন উৎপাদন হচ্ছে। জেলায় চাহিদা রয়েছে ৯৮ দশমিক ৮৫ টন। তেলাপিয়ার উদ্বৃত্ত ৬ দশমিক ৫৫ টন। পাঙ্গাশ রেণু উৎপাদন ৩ দশমিক ৬২ টন এবং শিং মাগুর, পাবদা, গুলসা রেণু উৎপাদন শূন্য দশমিক ৮৫ টন।

যশোরের হ্যাচারিগুলো রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, গ্রাসকার্প, বিগহেড, থাই সরপুটি, মিরর কার্প, জাপানি, চিতল, আইড়, তেলাপিয়া, মনোসেক্স তেলাপিয়া, শিং, কৈ, থাই কৈ, পাঙ্গাশ প্রভৃতি মাছের পোনা উৎপাদন করে থাকে। হ্যাচারির পাশাপাশি যশোরে ৫-৬ হাজার নার্সারি রয়েছে। জেলার দুই লাখ লোক মাছ উৎপাদন, চাষ এবং এই সংশ্লিষ্ট পেশার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন।

যশোর হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান গোলদার বলেন, ‘সবসময় আমাদের প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে রেণুপোনা উৎপাদন করতে হয়। এতে ব্যাহত হয় রেণুপোনা উৎপাদন।’

তিনি আরো বলেন, ‘তিন বছর আগে পোনার খাদ্য ডেফিডের দাম ছিল ২৮ টাকা কেজি, এখন সেটি কিনতে হচ্ছে ৮০ টাকায়। রাইস পলিস, ভুট্টা, সয়াবিন, খৈল, সরিষাসহ ওষুধের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। অথচ আবার পোনার দাম কমেছে। এরপর মড়ার ওপর খাঁড়া ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাংক ঋণ।’

মাছ চাষি অহিদুল্লাহ লুলু জানান, করোনার প্রভাবে রেণুপোনা উৎপাদন বন্ধ থাকার পর এখন তাদের কাছে তেমন টাকা নেই। ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারেননি তিনি। তারপরও যেহেতু তিনি এই পেশায় আছেন, সে কারণে তাদের পোনা উৎপাদন করতে হচ্ছে। তবে সব মিলিয়ে এ খাতের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ভালো নেই বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘করোনাকাল কাটিয়ে চলতি বছর যশোরের রেণুপোনা উদ্যোক্তারা তাদের কাজ শুরু করেছেন। আশা করছি, এবার ভালোভাবে পোনা উৎপাদন হবে। আমরা হ্যাচারি মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’

মন্তব্য

Beta version