-->
শিরোনাম

লতাপাতা বিক্রি করে চলে জীবন

পুলক পুরকায়স্থ, মৌলভীবাজার
লতাপাতা বিক্রি করে চলে জীবন
মৌলভীবাজার শহরের চৌমুহনী চত্বর থানকুনি পাতা বিক্রি করছেন বাসিত মিয়া

সত্তরোর্ধ্ব বাসিত মিয়া। ১৫ বছর ধরে নানা ঔষধি লতাপাতা, ফলমূল বিক্রি করে সংসার চালান। যে সময় যে ধরনের ভেষজ লতাপাতা কিংবা ফলমূল পান, তাই নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন ফুটপাত কিংবা কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বারান্দায়। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর গ্রামের বাসিত মিয়া। ভেষজগুণে সমৃদ্ধ থানকুনি পাতা বিক্রি করেন জেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে, পাড়ার অলিগলিতে।

জেলা শহরের চৌমুহনী চত্বরে কথা হয় বাসিত মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে পাঁচজনের সংসার তাঁর। পুঁজি খাটিয়ে ব্যবসা করার মতো সামর্থ্য নেই। তাই প্রাকৃতিকভাবেই জন্মানো নানা ধরনের ভেষজ লতাপাতা, ফলমূল কুড়িয়ে এনে তা বিক্রি করেন।

তিনি জানান, মৌলভীবাজারের বিস্তীর্ণ হাইল হাওর এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায় এই থানকুনি পাতা। এই পাতা বারো মাস পাওয়া গেলেও এখন বৃষ্টি পড়ায় এর ফলন ভালো। হাওর এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় ভোর বেলায় বেরিয়ে পড়েন পাতা সংগ্রহ করতে। দুপুরে চলে আসেন জেলা শহরে বিক্রির জন্য।তিনি বলেন, গ্রামে থানকুনি পাতা প্রায় বাড়িতেই পাওয়া যায়, কিন্তু শহরের পাওয়া যায় না। তাই এখানে চলে আসি। বিক্রিও হয়।

রমজান মাসে বাজারে চাহিদা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাতের আন্দাজে একমুঠো থানকুনি পাতা ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করি। দিনে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়।’

স্থায়ী বেশ কয়েকজন ক্রেতা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, থানকুনি পাতার রসে বহু রোগের উপশম হয়। এই পাতা তরকারির সঙ্গে খেলে পেটের সমস্যা দূর হয় বলে তারা আমার কাছ থেকেই পাতা কিনে নেন। দরদাম করেন না। ভালোবেসে তারা পয়সাও একটু বাড়িয়ে দেন।

তিনি বলেন, আমি অভাবী বয়স্ক লোক। কম দামে দামি জিনিস বিক্রি করি, তাই কেউ দরদাম করে না। বয়স হয়েছে, আগের মতো শরীর চলে না। অভাবের সংসার, তারপরও আল্লাহ আমাকে ভালোই রেখেছেন। রোজার মাস থাকায় এখন প্রতিদিনই এখানে আসি। বিক্রিও ভালো হয়।

থানকুনি পাতা কিনতে আসা, স্থানীয় পরিবেশকর্মী মহসিন পারভেজ বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে বাসিত মিয়ার কাছ থেকে থানকুনি পাতা কিনছি। এই পাতার রসে ভেষজ গুণ থাকায় নানা রোগের উপশম হচ্ছে বলে জানান তিনি। বাড়ির ছাদ বাগানের টবে থানকুনি গাছ লাগাবেন রিপা শাাহানাজ। বলে রেখেছিলেন থানকুনি গাছ আনতে। তাই ৫০ টাকা দিয়ে কয়েকটি গাছ কিনে নেন। তিনি বলেন, বাসায় ছোট্ট ছেলে আছে, তাকে প্রায়ই থানকুনি পাতার রস খাওয়াই।

আরেক ক্রেতা দিপু চৌধুরী জানান, রমজান মাসে সাহরির সময় থানকুনি পাতা দিয়ে একটা সবজি কিংবা মাছের ঝোল খাওয়া খুবই উপকারী। শহরে তো থানকুনি পাতা দেখাই যায় না। উনি নিয়ে আসায় কিনে নিলাম।

শহরের বাসিন্দা জিল্লুল আহমদ জানান, শিংমাছ, মাগুরমাছ এ জাতীয় মাছ দিয়ে থানকুনির ঝোল অনেক স্বাদ হয়। আমি যেখানেই পাই কিনি, দাম কত দেখি না।

মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, থানকুনি পাতা খুবই উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ। বিভিন্ন গবেষণায় পেয়ে তিনি নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করেন। এর ফলে পেটের পীড়া, বদহজম সমস্যার সমাধান হয়। বলা চলে পুরো শরীরে প্রত্যেক অংশের কর্মক্ষমতা সহায়তা করে।

মন্তব্য

Beta version