-->
শিরোনাম

এক মণ পেঁয়াজেও মিলছে না একটি তরমুজ

তারেক মাহমুদ, রাজশাহী ব্যুরো
এক মণ পেঁয়াজেও মিলছে না একটি তরমুজ
তাহেরপুর বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি চলছে

‘এক মণ পেঁয়াজ এর দাম ২শ’ টাকা। আর একটা তরমুজের দাম আড়াইশ টাকা। এক মণ পেঁয়াজ বিক্রি করেও একটি তরমুজ কিনতে পারলাম না’ আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর এলাকার কৃষক জিল্লুর রহমান।

শুক্রবার দুপুরে তাহেরপুর পৌরসভার সাপ্তাহিক হাটে পেঁয়াজ বিক্রির অপেক্ষা থাকাকালীন সময়ে এসব কথা বলেন তিনি।

জিল্লুর জানান, সকালে বিক্রির উদ্দেশ্যে তাহেরপুর হাটে দুই মণ পেঁয়াজ নিয়ে এসেছেন তিনি। দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষার পর এক মণ পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। এক মণ দুইশ টাকায় বিক্রি করে কাঁচা সবজি কিনেছেন। তবে রমজানে সন্তানদের চাওয়া পূরণে তরমুজ কেনার ইচ্ছে থাকলেও পেঁয়াজের বাজার পড়ে যাওয়ায় সেটি হয়নি।

তাহেরপুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের আমদানি অনেক বেশি। কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম কমে পাইকারিতে কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম ৪-১৫ টাকা।

ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা জানান, বাগমারার তাহেরপুরে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের হাট বসে। সোমবার ও শুক্রবার এ হাট বসে। ভোর থেকে শুরু হয় পেঁয়াজ আনা নেয়া। শুক্রবার এই হাটে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৫০-৬০০ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে ভালো মানের প্রতি মণ দেশি বড় আকারের পক্ক পেঁয়াজ ৫০০-৬০০ টাকা, মাঝারি আকারের ৩০০-৪০০ টাকা, ছোট আকারের ২০০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আকারে বড় হলেও ফাটা পেঁয়াজ এর দাম ছিল কম। ফাটা পেঁয়াজ প্রতি মন বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৮০ টাকা।

তাহেরপুর এলাকার কৃষক সোহেল রানা জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে ১৩০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছেন। এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ হয়েছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, ‘কম দামে ২০ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হলাম। যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি, তাতে উৎপাদন ব্যয়ই উঠেনি। আমার মতই একই অবস্থা অন্য কৃষকদের।’

গোয়ালকান্দি এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এবার আমার জমিতে সর্বমোট ২০০ মণ পেঁয়াজ হয়েছে। আজ হাটে ৩০ মণ পেঁয়াজ নিয়ে এসেছিলাম। ১০ মণ বিক্রি করেছি। দাম কম থাকায় ২০ মণ বাড়িতে ফেরত নিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘পেঁয়াজ জমি থেকে তুলতে একজন শ্রমিকের সারাদিনের পারিশ্রমিক ৬০০ টাকা। সঙ্গে তিন বেলা খাবার দিতে হয়। এখন যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে তা দিয়ে জমি থেকে পেঁয়াজ তোলার খরচটুকুও উঠবে না।’

তাহেরপুর বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান এই হাটের পেঁয়াজ কিনে ট্রাকযোগে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর পাশাপাশি পাবনা, কুষ্টিয়াসহ ও আরো অনেক জেলায় ব্যাপক পরিমাণে পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়ায় দাম কম। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলার পেঁয়াজ ঢাকাতে যাওয়া শুরু হয়েছে। বাজার দরও নিম্নগামী। সবমিলিয়ে দীর্ঘদিন পরে পেঁয়াজের এমন কম দাম।’

তাহেরপুরের এই হাটে রসুনের দামও গত সপ্তাহের তুলনায় ছিলো কমতি। শুক্রবার রসুন বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ৫০০-৬০০ টাকায়।

পেঁয়াজের দাম কমেছে রাজশাহী নগরীর কাঁচাবাজারগুলোতেও। রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার ও মাষ্টার পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়ার বিক্রি হচ্ছে ১০-২০ টাকা কেজি দরে। আর এক পাল্লা পেঁয়াজ (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়।

সাহেব বাজার এলাকার পাইকারী ব্যবসায়ী ইয়াসিন বলেন, ‘গত কয়েকদিন থেকেই অল্প অল্প করে পেঁয়াজের দাম কমেছিল। তবে শুক্রবার সকালে বাজারে প্রচুর পেঁয়াজের আমদানি হওয়ায় দ্রুত দরপতন হয়।’

মন্তব্য

Beta version