-->
শিরোনাম

কালের সাক্ষী মুঘল আমলের কাজীর মসজিদ

সুজন মোহন্ত, কুড়িগ্রাম
কালের সাক্ষী মুঘল আমলের কাজীর মসজিদ
কাজীর মসজিদ

প্রায় ৩০০ বছর ধরে তিনটি গম্বুজ নিয়ে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি। মুঘল আমলে স্থাপত্যের স্মৃতিবিজরিত চিহ্ন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এটি। এর নাম ‘কাজীর মসজিদ’। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে উত্তর দলদলিয়া গ্রামে এর অবস্থান।

ঐতিহাসিক এ মসজিদের স্থাপত্যকে ঘিরে স্থানীয়দের মুখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক প্রচলিত কথা। কখন, কিভাবে এটি নির্মিত হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস আজও জানা যায়নি।

উলিপুরের ইতিহাস ও লোকসাহিত্য গ্রন্থ এবং মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে যে ফারসি ভাষায় খোদাই করা শিলালিপি পাওয়া গিয়েছে তা থেকে ধারণা করা হয়, মসজিদটির নির্মাতা হচ্ছেন কাজী কুতুবুদ্দিন। তার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় কাজীর মসজিদ।

১২১৪ হিজরি সনের দিকে পারস্য (ইরান) থেকে উপমহাদেশে ধর্ম প্রচার করতে আসেন কুতুবুদ্দিন। ইসলাম ধর্ম প্রচার করার জন্য উলিপুরের দলদলিয়া গ্রামে এসে মসজিদটি নির্মাণ করেন তিনি।

মুঘল আমলের প্রাচীন এই মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। মসজিদটির দেয়ালে ও ভিতরে কারুকার্য দৃষ্টি জুড়িয়ে দেয় যে কোনো মুসল্লি ও দর্শনার্থীর। এতে রয়েছে মুঘল আমলে নির্মিত তিনটি গম্বুজ; যা ইট, চুন আর সুরকি দিয়ে তৈরি।

মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩২ ফুট ও প্রস্থ ১৩ ফুট। তিন একর জায়গা জুড়ে এর অবস্থান। তবে বর্তমানে এর সঙ্গে নতুন একটি মসজিদ তৈরি করে এর সীমানা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কাজীর মসজিদটি অধিগ্রহণ করে।

প্রতি শুক্রবারে মুসলিম ধর্মালম্বীদের পাশাপাশি ভিন্ন ধর্মের লোকেরাও মসজিদে ভিড় করেন। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী মানত হিসেবে টাকা, চিনি, গুড়, পায়েস, খোরমা, জিলাপি, খিচুড়ি, হাঁস-মুরগি, ছাগল, চাল, ডাল ও ধর্মীয় বই সামগ্রী নিয়ে আসেন তারা। দান করেন মসজিদের উন্নয়ন কাজেও।

মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. লিয়াকত আলী সরদার বলেন, ‘মসজিদটির পুরনো ভবন বেশ বড় ও এটি শক্ত ভিত্তির ওপর নির্মিত। এটি নির্মাণের জন্য ব্যবহার হয়েছে ইট, পাথর ও সুরকি। এটি যখন আবিষ্কার করা হয় তখন এর চারপাশে ছিল জঙ্গল। তা দেখে বোঝা যায় এটি অনেক আগে নির্মিত। এর গায়ে একটি শিলালিপি আছে।’

‘মসজিদের পূর্বদিকে প্রাচীনকালের সানবাঁধানো একটি পুকুর আছে। মসজিদের উত্তরে ঈদগাহ ও পশ্চিমে কবরস্থানসহ প্রায় তিন একর জমি ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। বর্তমানে শুক্রবারে প্রচুর লোক মসজিদে নামাজ পড়েন এবং দান-খয়রাত করেন’, যোগ করেন তিনি।

মসজিদের খাদেম মো. আবুল কাসেম বলেন, ‘আমার পূর্ব পুরুষরা এখানে কাজ করে গেছেন। আমি সেই হিসেবে এখানে কাজ করছি। প্রতি শুক্রবার এখানে লোকজন আসেন মানত নিয়ে। দান-খয়রাত করে মসজিদে নামাজ পড়েন।’

মন্তব্য

Beta version