‘পরীক্ষা কক্ষে ফেসবুক লাইভে এসেছিলাম, এটা আহামরি কিছু না। বিষয়টি খারাপ কিছু বলে আমি মনে করছি না। পরীক্ষা কক্ষে তখন আমাদের ম্যাডামরা ছিলেন। সে সময় আমি নিজের ফোন থেকেই ফেসবুকে লাইভ করি। তবে ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল একটা পদে থেকে কাজটা করা উচিৎ হয়নি। কিন্তু মানুষ একটা ভুল করলে তাকে এতো চেপে ধরতে হবে কেন? তাকে সেভ করাই সংবাদ কর্মীদের কাজ। অথচ তারা সেভ না করে এটা প্রকাশ করে দিচ্ছে। বিষয়টা খুবই আশ্চর্যজনক।’
শনিবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে ভোরের আকাশকে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন সুমন।
মূলত গত শুক্রবার (৮ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পরীক্ষা কেন্দ্রে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে পরীক্ষা দিতে এসে ফেসবুকে লাইভ করেন কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন সুমন। এ সময় তিনি ৯ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড লাইভে ছিলেন।
ফেসবুক লাইভে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা মনির হোসেন সুমন বলেন, ‘আমার খাতা দেখবেন। আমি ইংরেজিতে মাস্টার্স করা। স্যাররা ঘুমাচ্ছে, আমি ইংরেজিতে লিখেছি, সালামও লিখেছে।’ তখন পাশের শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘দেখি তুই কি লিখেছিস।’
তখন ভিডিওতে শোনা যায়, ‘না লিখে আমরা এ প্লাস পেতে চাই। ওই পাশে একটা খালা পরীক্ষা দিচ্ছে।’
লাইভে মনির আরো বলেন, ‘পরীক্ষার খাতায় বায়োডাটায় লিখে দিয়েছি ও গ্রুপের জায়গা লিখে দিয়েছি। এমপি আনার গ্রুপ করি। স্যাররা এ প্লাস না দিলে বোর্ড মোড ভেঙে ফেলবানে। জয়ও তাই লিখেছে। আমার লাইভটি কালীগঞ্জ ভাইস চেয়ারম্যান দেখছে।’
ভিডিওতে ভাইস চেয়ারম্যান মন্তব্যে লিখেছে, ‘গল্প না করে তোরা খাতায় লেখ।’
লাইভে মনির বলেন, ‘ম্যাডাম আপনি কিছু বলেন আমার লাইভে।’
লাইভে এ সময় মনির আরো বলেন, ‘কি সুন্দর পরীক্ষার হল, পরীক্ষা দিচ্ছি, তোরাতো জীবনে পরীক্ষা দিতে পারবিনে। রোজা থেকে পরীক্ষা দিচ্ছি, গোল্ডেন পাবো, এই দেখ সালামও আছে।’ ‘হলে আছি তাই কি, আমার প্রাণের সংগঠন কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ প্লাস তো পাবোই, ম্যাডামরা সবই বলে দিচ্ছে।’ এভাবে নানা মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান নাজিমকে একাধিকবার কল করা হলেও তা রিসিভ করেননি তিনি।
তবে জেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি রানা হামিদ বলেন, ‘আমি তো এখন সাবেক। তা না হলে এতোক্ষণে মনির হোসেন সুমনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম। আমি বলতে চাই তাকে অতিদ্রুত দল থেকে বহিষ্কার করাসহ আরো যদি কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার থাকে, তাহলে সেটা নেওয়া উচিত। কারণ মনির হোসেন সুমন পুরো ছাত্রলীগকেই কলঙ্কিত করে ফেলেছে। পরীক্ষার হলে সুমন লাইভ করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে কোথায় নিয়ে গেল তা বলার নয়। এটার জন্য আমরা চরমভাবে দুঃখিত।’
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার বলেন, ‘একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এটা করতে পারে না। আর একজন ব্যক্তি যদি নিজের ফেসবুক আইডি থেকে পরীক্ষার কক্ষে লাইভ করে কিংবা অন্য কিছু করে তাহলে তার দায়ভার দল নিতে পারে না। তবে বিষয়টা আমি জেনেছি, সাংগঠনিকভাবে কি করা যায় সেটা দেখছি।’ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ইনচার্জ মাহবুব উল ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মন্তব্য