নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মহাঅষ্টমী পুণ্য স্নানোৎসব চলছে।
দুদিনব্যাপী এই স্নানোৎসব শুক্রবার (৮ এপ্রিল) রাত ৯টা ১১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে শুরু হয়ে শেষ হবে শনিবার (৯ এপ্রিল) রাত ১১টা ৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে।
শনিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র হে লোহিত্য আমার পাপ হরণ কর’ এই মন্ত্র পাঠ করে ফুল, বেলপাতা, ধান, দুর্বা, হরিতকী, ডাব, আমপাতা নিয়ে লাঙ্গলবন্দ এলাকায় স্নানে অংশ নিতে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পুণ্যার্থীদের ঢল নামে। এছাড়া সড়কের দুই পাশে বসেছে অস্থায়ী মেলা।
মূলত করোনা সংক্রমণজনিত কারণে গত দু’বছর বন্ধ ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাষ্টমী পুণ্য স্নানোৎসব। যার ফলে এবার পুণ্যার্থীদের সমাগমও ছিল বেশি। শুক্রবার রাতে লগ্ন শুরু হলেও শনিবার সকাল থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের তিন কিলোমিটার পর্যন্ত মানুষের ঢল নামে। অন্যান্যবারের মতো এবারও পার্শ্ববর্তী ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা থেকে কয়েক লাখ পুণ্যার্থী এই স্নানোৎসবে অংশ নিয়েছেন।
১৮টি স্নান ঘাটের মাধ্যমে পুণ্যার্থীরা স্নান করছেন। এদিকে স্নানোৎসবকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাঙ্গলবন্দ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে কাপড় বদলানোর জায়গা ও যানজট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন পুণ্যার্থীরা।
তবে স্নানোৎসবের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত মানুষদের। এই সড়কে দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই এই যানজট সৃষ্টি হয়। গতকাল শনিবার সকালে এর তীব্রতা বাড়তে থাকে। এতে পুণ্যার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ করিম খান জানান, শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী অষ্টমী স্নানোৎসবের কারণে হাজারো হিন্দু ধর্মাবলম্বী লাঙ্গলবন্দে সমাবেত হয়েছেন। এর ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে যানজট নিরসনে তাদের একাধিক টিম মহাসড়কে কাজ করছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে আসা পুণ্যার্থী আশা লতা বলেন, ‘তীর্থ স্থান লাঙ্গলবন্দ। পূর্ণ লাভের আশায় পরিবারের সবাই স্নান করতে এসেছি। স্নান করে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছি। ভগবান যেন সবাইকে সুস্থ ও সুন্দর রাখেন।’
পুরোহিত পঙ্কজ চক্রবর্তী বলেন, ‘পুণ্যার্থী যারা এসেছেন তাদেরকে মন্ত্র পাঠ করিয়ে স্নান করাচ্ছি। এইখানে স্নান করলে পাপ মোচন হয় এবং মনোবাসনা পূরণ হয়। অন্য বছরের তুলনায় এবার পুণ্যার্থী বেশি।’
এদিকে স্নানোৎসবকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। লাঙ্গলবন্দের তিন কিলোমিটার পর্যন্তই রয়েছে পুলিশ-র্যাবের কড়া পাহারা।
লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি সরোজ সাহা জানান, পুণ্যার্থীর পদচারণায় মুখরিত মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ। এবার স্নানোৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পুণ্যার্থীরা এসেছেন। পুণ্যার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখের মতো হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম বলেন, ‘লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবকে কেন্দ্র করে আমরা তিন স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। সেইসঙ্গে সিসি ক্যামেরা দিয়ে সমস্ত এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুলিশের স্পেশাল টিম, নৌ পুলিশ, র্যাব এবং হাইওয়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া কোস্টগার্ড বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরি দল ও ফায়ার সার্ভিসও প্রস্তুত রয়েছে। সবমিলিয়ে নিশ্চিন্দ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
মন্তব্য