-->
শিরোনাম

আগাম জাতের ধানে কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ

পুলক পুরকায়স্থ, মৌলভীবাজার
আগাম জাতের ধানে কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ
মৌলভীবাজারের কাওয়াদীঘি হাওর থেকে আগাম জাতের ধান কেটে বাড়ি ফিরছেন কৃষকরা

ব্রি-২৮ আগাম জাতের ধান চাষের ফলে মৌলভীবাজারের কাওয়াদীঘি হাওরের কৃষকদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। বৃষ্টিহীন অধিক খরায় ব্লাস্ট রোগ ও চিটায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হাওরগুলোয় আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ১৮ মণ ধান পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও মিলছে ৩ থেকে ৫ মণ।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, বেশি ও আগাম ফসল পাবেন এই আশায় বোরো মৌসুমে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষাবাদ করেন তারা। কিন্তু এ বছর ধানে ব্লাস্ট রোগ ও চিটা দেখা দিয়েছে। ফলন ভালো হলে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন- এই আশায় অধিকাংশ কৃষক ধারদেনা করে ব্রি-২৮ ধানের চাষাবাদ করেছিলেন। এখন ঋণের বোঝা মাথায়, ধার পরিশোধে তাদের খেতে হবে হিমশিম।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৪৩০ হেক্টর। চাষাবাদ হয়েছে ৫৭ হাজার ৫৭০ হেক্টর। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ জাতের আগাম ধানর চাষাবাদ হয়েছে।

জানা গেছে, হাওর অঞ্চলের কৃষক পরিবারগুলো বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। ভালো ফলন হলে মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে জীবনযাপন সুখকর হয়। ফলন খারাপ হলে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়লে সারাবছর ধারদেনা করে চলতে হয়। হাওরপাড়ের মানুষের মূল আতঙ্ক হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-বন্যা।

এসব দুর্যোগ এলে তাদের সোনালি স্বপ্ন পানিতে মিশে যায়। এ জন্য অনেক কৃষক তাদের নির্দিষ্ট জমির অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ আগাম জাতের ধান চাষাবাদ করেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় ও খরার প্রভাবে ধানের ছড়ায় ধান কম, ধানে শীষ রোগ এবং ছড়ায় অধিকাংশ ধানে চিটা, সার নেই। ফলে প্রকৃতির দ্বিমুখী সংকটে পর্যাপ্ত ফসল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক পরিবারগুলো।

হাওর ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। অন্যান্য ধান ভালো হয়েছে। তবে শঙ্কা রয়েছে অতিবৃষ্টি ও বন্যার। কারণ এখনো ধান পাকতে ও কাটতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ লাগবে।

কৃষক মুকুন্দ নমঃশূদ্র বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় চার হাজার টাকা। প্রত্যাশা ছিল প্রতি বিঘায় ১৫ মণের ওপরে ধান পাওয়া যাবে। এখন মনে হচ্ছে তিন থেকে চার মণ ধান মিলবে। বেশির ভাগ ধান চিটা। আগাম জাতের এ ধান থেকে খরচও উঠবে না।

প্রবীণ কৃষক সুখু বিশ্বাস আক্ষেপ করে বলেন, ‘ধারদেনা করে চার বিঘা জমির মধ্যে দেড় বিঘা ব্রি-২৮ ধান চাষ করেছিলাম। আশা ছিল ভালো ফলন পাব, কিন্তু কপাল খারাপ। ধারণা করেছিলাম ২৫ মণের ওপরে ফলন পাব। এখন সেখানে ৬ মণের বেশি ফলন পাব না।’

দিনমজুর রিপন সরকার ৫শ টাকা মজুরিতে ধান কাটতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘মূল ধান পাকতে দেরি আছে। এখন যে ধান কাটছি তা আগে পেকে যায়। মালিকপক্ষ আমাদের দৈনিক ৫শ টাকা মজুরি দিচ্ছেন। ধানের যে অবস্থা আমাদের মজুরি দিয়ে তাদের খুব একটা লাভ থাকবে বলে মনে হয় না।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সামছুদ্দিন আহমদ জানান, জেলায় এ বছর ১৩ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ জাতের আগাম ধান চাষাবাদ হয়েছে। অধিক খরায় এই আগাম জাতের ফলন তেমন ভালো হয়নি। এর মধ্যে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণও ছিল। এতে কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি আগাম জাতের ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষাবাদ করতে, তখন তারা উপকৃত হবেন।’

মন্তব্য

Beta version