-->
শিরোনাম

স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাসের পর বিয়েতে আপত্তি: সেই ইউএনও প্রত্যাহার

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাসের পর বিয়েতে আপত্তি: সেই ইউএনও প্রত্যাহার
ইউএনও মনজুর

টাঙ্গাইলের বাসাইলের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বর্তমানে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের ইউএনও মনজুর হোসেনকে প্রত্যাহার করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক শামীম আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে কিশোরগঞ্জ থেকে তাকে রিলিজ করে দিয়েছি।’

করিমগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাফসা নাদিয়া ইউএনও পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।

উম্মে হাফসা নাদিয়া বলেন, ‘আমি যতদূর শুনেছি করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ক্লোজড করেছে। তিনি জেলা প্রশাসকের থেকে রিলিজ নিয়ে চলে গেছেন।’

জানা গেছে, মনজুর হোসেন টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালে মির্জাপুর থানার এক কলেজছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।

এ নিয়ে ওই ছাত্রী সিনিয়র সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে প্রত্যাহার করে।

আরো পড়ুন: ইউএনওর বিরুদ্ধে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী বলেন, ২০২১ সালে বাসাইলে দায়িত্ব থাকাকালীন মনজুর হোসেনের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার পরিচয়। এক পর্যায়ে ইউএনও তাকে উদ্দেশ্যেমূলকভাবে তার সরকারি বাসভবনে নিয়ে যান। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন। এদিকে পারিবারিকভাবে অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয় তার। বিষয়টি ইউএনওকে জানালে বিয়ের আশ্বাসে তাকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসেন তিনি। পরে কুমুদীনি কলেজের কাছে পাওয়ার হাউজের পেছনে একটি বাসা ভাড়া নেন মনজুর।

নিজের সব তথ্য গোপন রেখে মিথ্যে পরিচয়ে বাসা ভাড়া নেন ইউএনও। সেখানে তারা দুই মাস সংসার করেন। এক পর্যায়ে কলেজছাত্রী তাকে বিয়ে করার ও সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ইউএনওকে চাপ দেন।

তখন ইউএনও ভারতে যাওয়ার পর বিয়ে করবেন বলে কলেজছাত্রীকে আশ্বাস দেন। এরপর তারা মেডিকেল ভিসায় ভারতের হায়দরাবাদে যান। সেখানে তারা দুজনেই চিকিৎসা নেন। ওই সময় কলেজছাত্রী ইউএনওর ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের করে জানতে পারে তিনি বিবাহিত এবং তার দুটি সন্তানও রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কলেজছাত্রী উত্তেজিত হলে ইউএনও তাকে থামতে বলেন।

পরে ইউএনও মনজুরের সঙ্গী জোবায়েত ওই কলেজছাত্রীর মোবাইল ছিনিয়ে নেন। মনজুরের সঙ্গে ওই ছাত্রীর ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও ও ম্যাসেজসহ সব আলামত মুছে ফেলেন জোবায়েত। তখন ইউএনও কলেজছাত্রীকে বিষয়টি কারো কাছে শেয়ার না করার অনুরোধ জানান এবং জানালে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

ভারতে ১২ দিন থাকার পর গত ১২ অক্টোবর বাংলাদেশে ফেরত আসেন তারা। এরপর কলেজছাত্রী তার বাবার বাড়ি ফিরে যান। পরে তার সঙ্গে রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে দেখা করেন মনজুর। পুনরায় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করার কথাও বলেন তিনি।

ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী বলেন, ‘ফেসবুকে ইউএনও মনজুর হোসেনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে আমাকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে তার সরকারি বাসভবনে নিয়ে যায়। সেখানে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এরপর বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিবাহিত হয়েও তিনি অবিবাহিত পরিচয় দিয়েছেন। আমি সরল মনে তার কথা বিশ্বাস করেছি। তিনি শুধু আমাকে ব্যবহারই করেছেন, সামাজিকভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দেননি। আমি আমার প্রাপ্য অধিকার চাই।’

মন্তব্য

Beta version