দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ রক্ষার্থে লালমনিরহাট অংশে বাম তীরে নির্মিত ফ্লাড বাইপাস সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গত বছরের অক্টোবরে হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফ্লাড বাইপাস সড়কটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে জরুরি বরাদ্দে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির সংস্কার করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই আবারো সড়ক এবড়োখেবড়ো হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় যান চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ফ্লাড বাইপাস সড়কটি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থেকে ডিমলা হয়ে নীলফামারী যাতায়াতের একমাত্র সড়ক। জরাজীর্ণ এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহণ চলাচল করছে। সড়কটিতে বালু ও মাটি ভরাটের কারণে খরাতে প্রচুর ধুলা আর সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদায় একাকার হয়ে যায়। বিকল্প সড়ক না থাকাসহ দীর্ঘদিনেও বাইপাস সড়কটি চলাচল উপযোগী না হওয়ায় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলছে না লাখো মানুষের।
পাউবো এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২০ অক্টোবর হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। ওই দিন তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প রক্ষায় নির্মিত সড়কের (ফ্লাড বাইপাস) ৩০০ মিটারের মতো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে বন্ধ হয়ে যায় লালমনিরহাটের সঙ্গে নীলফামারীর যোগাযোগ। পরে ইমার্জেন্সি বরাদ্দ নিয়ে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটির সংস্কার করে পাউবো। কিন্তু চলাচল উপযোগী সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি কিছুদিন না যেতেই খানাখন্দে ভরে যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফ্লাড বাইপাস সড়কে সামান্য বৃষ্টিতেই বিভিন্ন স্থানে কাদামাটিসহ ছোট বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন দুই জেলার হাজার হাজার মানুষ ও গাড়িচালকরা। খানাখন্দে ভরা এ সড়কে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলছে হালকা ও ভারী যান। এ ছাড়া অটোরিকশা ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন উল্টে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারের চরম অবহেলা ও স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সঠিক তদারকি না থাকায় সড়কটির বেহাল অবস্থা হয়েছে। খানাখন্দে ভরা এই সড়কে একটু বৃষ্টি হলেই গর্তগুলোতে পানি জমে বেহাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রী ও চালকরা। শুধু তাই নয়, রোগী পরিবহণ ও জরুরি প্রয়োজনে এই সড়ক দিয়ে দ্রুত যাতায়াত করা যায় না। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন গাড়িচালক ও স্থানীয়রা।
এই সড়কে প্রতিদিনই চলাচল করেন ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালক মজিবর মিয়া। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘এই সড়ক দিয়ে গাড়ি কিংবা হেঁটে যেভাবেই যান, কষ্ট সইতে হবে। রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। যখন-তখন ইজিবাইকের কন্ট্রোলার পুড়ে যাচ্ছে। অথচ একটা কন্ট্রোলারের দাম ৫ হাজার টাকা। আর সারাদিনে রোজগার হয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। সরকারের কাছে আবেদন, কিছু ভাঙা ইটের টুকরা যদি এই রাস্তায় ফেলার ব্যবস্থা করে তা হলে অন্তত গাড়িগুলো সুন্দরভাবে চালানো সম্ভব।’
ট্রাকচালক সবুজ আলী বলেন, ‘একদিন হালকা বৃষ্টি হলে গাড়ি নেওয়া যায় না। শত শত গাড়ি আটকে থাকে। যানজট সৃষ্টি হয়। সড়কটি গত বন্যার সময় ভেঙে গেছে। তারপর সরকার শুধু দুপাশ দিয়ে বালু দিয়েছে, আর কোনো কাজ করে নাই। আমরা চাচ্ছি সড়কে দ্রুত ইটের টুকরা ফেলা হোক। লাখ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে, কিন্তু মানুষ ঠিকমতো চলাচল করতে পারছে না। এটার কারণে সরকারের দুর্নাম হচ্ছে। সরকারের উচিত গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির সংস্কারে নজর দেওয়া।’
হাটে ছাগল বিক্রি করতে যাচ্ছিলেন ওই এলাকার আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এলা তো বৃষ্টি নাই, তার পরও দেকো কি অবস্থা। আর যখন বৃষ্টি হইবে, তখন তো চলাফিরা আরো কষ্ট হইবে। এ সমস্যা তো জটিল। এই যে হাট যামো ছাগল ধরি আইনো। হাটি আসিছি এপাক থাকি ওপাকে যেয়া গাড়িত চড়ির লাগিবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ-দৌলা ভোরের আকাশকে জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লাড বাইপাস সংস্কারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু করে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করা হবে। তবে বন্যার আগেই এটি সংস্কারের চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য