ভারতে বৃষ্টির ফলে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নেত্রকোনার হাওর অঞ্চলের নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার আশঙ্কা সৃষ্টি রয়েছে। এছাড়া নেত্রকোনা অঞ্চলেও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় দ্রুত পাকা বোরো ধান কাটতে কৃষককে পরামর্শ দিচ্ছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, জেলা কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত, খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচ এম আরিফুল ইসলাম, মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বুলবুল আহমেদসহ প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তারা মদন এবং খালিয়াজুরির বিভিন্ন হাওর ঘুরে কৃষকদের ডেকে এনে দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছেন।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল বলেন, ‘পাকা ধান দ্রুত কাটতে আমরা হাওর অঞ্চলের কৃষককে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। কারণ অতিবৃষ্টিতে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের প্রভাবে নতুন করে জেলার নদনদী, হাওরসহ নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়বে। এ জন্য হাওরের সোনালি ধান কেটে দ্রুত ঘরে তুলতে বলা হচ্ছে। এ নিয়ে কৃষকের মধ্যে সচেতনতামূলক ও অবহিতকরণ প্রচারণাও চালানো হচ্ছে।’ খালিয়াজুরির উপজেলা সদরের কৃষক ফরিদ মিয়া জানান, এলাকায় শ্রমিক সংকট থাকলেও মেশিনের সাহায্যে এখন দ্রুত ধান কাটা যাচ্ছে। শতাধিক শ্রমিক একদিনে যে ধান কাটার কথা একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টারে মেশিনে এক দিনেই তা কাটা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, ‘আধুনিক পদ্ধতিতে ধান কাটা-মাড়াইয়ের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় জেলায় নতুন পুরোনো মিলিয়ে প্রায় ১৪৫টি হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা চলছে। নতুন করে আরো ১১০টি হারভেস্টার মেশিন দেওয়া হয়েছে। হাওরে সোমবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে।’ এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১০টি উপজেলায় এ বছর ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। এর মধ্যে হাওর অঞ্চলে অর্ধেক জমি রয়েছে। গত ২ এপ্রিল সন্ধ্যায় হঠাৎ করে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খালিয়াজুরির ধনু নদের পানি ৭ থেকে ৮ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমায় চলে আসে। পানির প্রবল চাপে খালিয়াজুরি ও মদন উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোয় চাপ বেড়ে যায়।
গত ৩ এবং ৪ এপ্রিল মদনের ফতেপুর হাওর, খালিয়াজুরির কীর্তনখোলা হাওর, লক্ষ্মীপুর হাওরসহ কয়েকটি হাওরের বেড়িবাঁধের বাইরের অংশ তলিয়ে যায়। এতে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমির কাঁচা বোরো ধান পানিতে ডুবে যায়। এছাড়া লেপসাই হাওর, চৈতারা হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের অন্তত ২০টি স্থান হুমকিতে পড়ে। এসব বাঁধের অনেক অংশে ধস ও ফাটল দেখা দেয়। তবে পাউবো ও উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় কৃষককে নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলোয় সংস্কারকাজ চালায়। এখন পর্যন্ত নেত্রকোনার কোনো ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনা ঘটেনি। এদিকে গত বুধবার রাত থেকে নেত্রকোনার হাওর-নদীতে পানি কমতে শুরু করায় কৃষক ফসল হারানোর শঙ্কা ভুলতে বসেছিলেন। কিন্তু রোববার আবারো ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে মর্মে পূর্বাভাস পেয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক।
মন্তব্য