-->

ফেনসিডিল আমদানির পরামর্শ দিলেন আ. লীগ নেতা!

জে আই সমাপ্ত, লালমনিরহাট
ফেনসিডিল আমদানির পরামর্শ দিলেন আ. লীগ নেতা!
সংগৃহীত ছবি

ফেনসিডিলের কারণে হাজার কোটি টাকা ভারতে পাচার হয় দাবি করে লালমনিরহাট আওয়ামী লীগের এক নেতা ফেনসিডিল আমদানির পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি মনে করেন, বৈধ পদ্ধতিতে ফেনসিডিল আমদানি করে ভ্যাট-ট্যাক্স যুক্ত করে বাজারে বিক্রি করলে সরকার বড় অংকের রাজস্ব আহরণ করতে পারবে। ফেনসিডিল ঘুমের ওষুধ ছাড়া আর কিছুই নয় জানিয়ে পুলিশ সুপার ও ওসির সামনে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও একবার ফেনসিডিল খেয়েছি।’

লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম প্রধানের এ বক্তব্য এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

গত সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে আদিতমারী থানা আয়োজিত ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে আজিজুল ইসলাম প্রধান এ বক্তব্য দেন।

ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠানে আজিজুল ইসলাম প্রধান বলেন, ‘সত্য বলব। তাতে জেল ফাঁসি যা হয় হোক। ভারতে ফেনসিডিলের দাম মাত্র ৩৫ টাকা। এই ফেনসিডিলের কারণে প্রতিদিন হাজার কোটি টাকা ভারতে পাচার হচ্ছে। আমার তিন ছেলে মাস্টার্স পাস করেছে। তাদের নিষেধ করলেও গোপন জিনিসের ওপর আরো আগ্রহী হতে পারে....।’

‘ভারতে গিয়ে আমি নিজেও এক বোতল খেয়েছি, ঘুম ছাড়া কিছু হয় না। ভারতে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি, দেশের তুস্কা সিরাপের মতোই ফেনসিডিল। যাতে ঘুম ছাড়া কিছু নেই। অথচ এটার জন্য হাজার কোটি টাকা ভারতে পাচার হচ্ছে। বিষয়টা বঙ্গবন্ধু কন্যার নজরে আনা যায় কি না’, বলেন আজিজুল ইসলাম।

ভারত থেকে ৩৫ টাকায় ফেনসিডিল কিনে ৭০ টাকা ট্যাক্স দিয়ে ১০০ টাকায় বিক্রি করলেও ব্যবসা হবে, রাজস্ব বাড়বে সরকারের। তাই বিষয়টি নিয়ে উচ্চ মহলে আলোচনা করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

তার এমন বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সবাই অট্টহাসিতে প্রতিবাদ জানান। এ সময় কৌশলে তার বক্তব্য থামিয়ে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি আদিতমারী থানার ওসি মোক্তারুল ইসলাম।

আদিতমারী উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সুলতান হোসেন বলেন, ‘আমরা যারা অনুষ্ঠানে ছিলাম আজিজুল ইসলাম প্রধানের এমন বক্তব্য শুনে অবাক হয়েছি। এ রকম বক্তব্য তার দেয়া উচিত হয়নি। সবাই তার এমন বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে।’

বক্তব্যের বিষয়ে আজিজুল ইসলাম প্রধান বলেন, ‘ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠানে আমি বক্তব্য দিয়েছি। আমি ঊর্ধ্বতন মহলকে বুঝাতে চেয়েছি- ভারত থেকে ফেনসিডিল আমদানি করলে কম দামে পাওয়া যেত। কিন্তু আমদানি ব্যবস্থা না থাকায় এখন একটি করে ফেনসিডিল কিনতে হয় দেড় হাজার টাকা দিয়ে।

‘অথচ ভারতে ৫০ টাকা হলেই ফেনসিডিল পাওয়া যায়। এতে করে আমাদের টাকা ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া দেশের তুস্কা সিরাপের (কাশির সিরাপ) মতোই ফেনসিডিল। এতে কোনো অসুবিধা নেই’, দাবি করেন তিনি।

আদিতমারী থানার ওসি মোক্তারুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রশ্ন শুনে কোনো মন্তব্য না করেই কলটি কেটে দেন।

লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলেন, ‘ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠানে সে তার নিজের কথা বলতেই পারে। এটা নিয়ে বেশি পেঁচানের কিছু নেই।’

মন্তব্য

Beta version