রাজবাড়ীতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন। এর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি। ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ায় জেলার সদর হাসপাতালে স্থানসঙ্কুলান হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের বারান্দা, মেঝে, এমনকি হাসপাতালের বাইরে খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা নিচ্ছেন আক্রান্ত রোগীরা।
হাসপাতা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন ১১০ জন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ১৫-২০ মিনিট পরপরই রিকশা, অটোরিকশা এসে দাঁড়াচ্ছে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে। এরপর ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর স্বজনরা ধরাধরি করে গাড়ি থেকে নামাচ্ছেন। পরে ওইসব রোগীকে হাসপাতালের হুইলচেয়ারে করে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আক্রান্তরা কেউ একদিন, কেউবা দুইদিন আগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানায় স্বজনরা।
এদিকে হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে সিট সংখ্যার রয়েছে মাত্র ১২টি। অথচ রোগী চাপ সিটের থেকে অনেক বেশি। ফলে যারা সিট পাননি তারা ডায়রিয়া ওয়ার্ডের মেঝে ও ওয়ার্ডের বাইরে মাদুর বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বাইরে মাটির ওপরে মাদুর বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে আলীপুর ইউনিয়ন থেকে আসা আলেয়া বেগম (৪৭)। তিনি জানান, গতকাল থেকে পাতলা পায়খানা। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে স্যালাইন ও ওষুধ খেয়েও কমেনি। সকালে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। এখানে এসে কোনো সিট পাইনি। বাধ্য হয়েই ডায়রিয়া ওয়ার্ডের বাইরে মাদুর বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি।
উপজেলার ভবদিয়া থেকে নাজমা বেগম এসেছেন তার তিন বছরের নাতনি সামিয়াকে নিয়ে। তিনি জানান, গতকাল থেকে হঠাৎ পেটে ব্যথা শুরু হয়। তারপর থেকে ডায়রিয়া শুরু হলে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু হাসপাতালে কোনো সিট নেই। ডায়রিয়া ওয়ার্ডেও জায়গা নেই। তাই ওয়ার্ডের বাইরে মাদুর বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি।
সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স আইনুর নাহার জানান, গত ৭২ ঘণ্টায় ৬৪ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। গত সোমবার সকালে থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন। হাসপাতালে বেড রয়েছে মাত্র ১২টি। বেড থেকে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন বলেন, ‘আবহাওয়াজনিত কারণে ও খাদ্যে ব্যাকটেরিয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। এখন রমজান মাস, ইফতারের সময় খাবারে খুব সাবধান থাকতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ সময় বেশি ভাজাপোড়া খাবার যেন আমরা না খাই। কারণ গরমে খাবার নষ্ট হয়ে যায়। আর এই নষ্ট খাবার ডায়রিয়ার একটা কারণ হতে পারে। খাবারের আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ডায়রিয়া রোগীদের জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ ও খাবার স্যালাইন আছে। বেডের স্বল্পতা থাকার কারণে অনেক রোগীকেই বেড দিতে পারছি না। যে কারণে রোগীদের মেঝেতে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে। প্রতিটা রোগী যেন বেড পায় তার ব্যবস্থা দ্রুত করা হবে।’
মন্তব্য