-->

দুর্গন্ধ আর বিষাক্ত ধোঁয়ায় সয়লাব পৌরসভা

আমীর হামজা, হবিগঞ্জ
দুর্গন্ধ আর বিষাক্ত ধোঁয়ায় সয়লাব পৌরসভা
হবিগঞ্জের পৌর এলাকায় সওজের জায়গায় পোড়ানো হচ্ছে আবর্জনা

প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো হবিগঞ্জ পৌরসভায় এখনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠেনি। ফলে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনার ভাগাড় গড়ে উঠায় পৌর নাগরিকদের দুর্বিষহ যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিন টনের পর টন ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে শহরের নতুন স্টেডিয়ামের সামনে বাইপাস সড়কের কিনারে। প্রায় এক একর জায়গা জুড়ে প্রতিনিয়ত বর্জ্য ফেলায় ওই সড়ক দিয়ে চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধ আর বিষাক্ত ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ এই পৌরবাসী।

প্রতিদিন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও অসংখ্য পথচারী নাকে-মুখে কাপড় গুঁজে ওই এলাকা পার হয়। শুধু ময়লা ফেলাতেই থেমে থাকেনি পৌরসভা। স্থান সংকুলান বাড়াতে সেখানে সকাল-সন্ধ্যা বর্জ্যরে স্তূপে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও আগুন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পৌরসভার কনজারভেনসি বিভাগ।

পলিথিন, প্লাস্টিকসহ নানা ধরনের আবর্জনা পোড়া ধোঁয়ায় পার্শ্ববর্তী জেলা আনসার ভিডিপি অফিস, বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, দি রোজেস কিন্ডারগার্ডেন, জজকোর্ট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

এছাড়া রাজনগর, সুলতান মাহমুদপুর আবাসিক এলাকায় অনেকটা দরজা জানালা বন্ধ করেই বসবাস করছে শত শত পরিবার। নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় শিশু, বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।

অপরদিকে বর্জ্যে বাইপাশ সড়কের পাশে খালটিও ভরে যাচ্ছে। একটু সময় বৃষ্টি হলেই নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্ত হয়ে রাস্তাঘাট, দোকানপাট, এমনকি বাসাবাড়িতেও পানি প্রবেশ করে।

শহরের পরিবেশ নষ্ট করার প্রতিবাদে একাধিকবার মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।

বাপা হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভার রাস্তাঘাট এতো নোংরা থাকতে পারে তা চিন্তা করা যায় না। কিভাবে বছরের পর বছর পৌরসভাযুক্ত জনবহুল এলাকায় বর্জ্য ফেলার পর আগুন দেওয়া হয় তা বোধগম্য নয়। এসব কাজ করার আগে সকল বয়সি নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল।

বৃন্দাবন সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী তপন দেব বলেন, ‘ময়লার পচা গন্ধে ক্লাসে মন বসে না। পোড়া গন্ধ সহ্য করতে না পেরে কয়েকদিন বমি করেছি।’

ডা. লোকমান বলেন, ‘পলিথিন ও প্লাস্টিকের পোড়া ধোঁয়া মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য খুবই বিপদজনক।

১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হবিগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান আয়তন ৯ দশমিক ০৫ বর্গ কিলোমিটার। প্রথম শ্রেণি এই পৌরসভায় প্রায় সোয়া লাখ নাগরিক বসবাস করেন।

পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নাগরিকদের দাবির মুখে মানসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রায় ৮/১০ বছর আগে সাবেক মেয়র জি কে গউছের আমলে ‘ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। শহর থেকে প্রায় পার্শ্ববর্তী বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের আতুকুড়ায় ২ একর ২০ শতক সরকারি খাস জমি জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। জমির মূল্য বাবদ প্রায় ১৮ লাখ টাকা পরিশোধ করে পৌরসভা। কিন্তু এলাকাবাসীর বাধার কারণে সমস্ত আয়োজন ভেস্তে যায়। পরবর্তীতে স্থান নির্ধারণ নিয়ে চলে সময়ক্ষেপণ।

সম্প্রতি হবিগঞ্জ সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে রিচি ইউনিয়নের উত্তরকুল মৌজায় প্রায় ২ একর ৫ শতক ভূমিতে ময়লা ফেলার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ময়লাবাহী ট্রাক চলাচলের জন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে খোয়াই নদীর বাঁধ প্রশস্ত করা হয়েছে। কিন্তু ময়লা রাখার স্থানটি নিচু হওয়ায় মাটি ভরাটের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

পৌরসভার প্রকৌশলী দিলিপ দত্ত জানান, মাটির রাস্তাটি এইচবিবি দ্বারা উন্নয়ন করা হবে। তবে কবে নাগাদ বাইপাস এলাকা থেকে ময়লার স্তূপ স্থানান্তর হতে পারে এর সঠিক সময় জানাতে পারেননি তিনি।

তিনি জানান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়টি পৌর পরিষদ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। ড্যাম্প প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য গত ৯ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় ইউনাইটেড নেশন ক্যাপিটাল ডেভেলপম্যান্ট ফান্ডের (ইউএনসিডিএফ) সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট পাওয়ার প্রাইভেট লিমিটেডের এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় বলা হয় হবিগঞ্জসহ দেশের ৬টি জেলায় দ্রুত সময়ের মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে।

মন্তব্য

Beta version