দিনাজপুর জেলা সদর হতে ১৬ কি.মি. পূর্বে চিরিরবন্দর উপজেলা। এখানকার আব্দুলপুর ইউনিয়নের একট্টি ছোট্ট গ্রাম চিরিরবন্দর। ১৯৯৯ সালে সরকারি অর্থায়নে এ গ্রামে দুই একর ৮৫ শতক খাসজমিতে রেলব্রিজ আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ প্রকল্পে বাস করছে ৩০টি পরিবার।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২৩ বছর আগে দুই শতক জমির ওপর টিনের চালাযুক্ত ঘর পেয়েছিল পরিবারগুলো। প্রকল্পে বসাবাসকারী ৩০টি পরিবারে সদস্য সংখ্যা বাড়লেও সংস্কার করা হয়নি বাসযোগ্য ঘরগুলোর। কোনো ধরনের সংস্কার না হওয়ায় সেসব ঘর থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এমন অসুবিধার মধ্যে থাকা এসব বাড়ির কাছেই নির্মাণ করা হচ্ছে মুজিববর্ষের উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্প ৩-এর অধীনে ৫০টি ঘর। ওই ৩০ পরিবারকে অগ্রাধিকার ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ভূমিহীনদের এসব ঘর দেওয়া হবে। তবে এ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে বাধা সৃষ্টি করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী সিরাজুল ইসলাম।
সিরাজুল ইসলাম ৫নং আব্দুলপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মৃত মকসেদ আলী সরকারের ছেলে।তিনি দাবি করছেন, ওই সম্পত্তির মধ্যে পৈতৃক সূত্রে ৩ একর জায়গার মালিক তিনি। এ জমি ১৯৬৬ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কাছে কবলা দলিল মূলে খরিদ করেছেন তার বাবা। যার ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে মুজিববর্ষের উপহারের বাড়ি। এই ঘটনায় তিনি আদালতে মামলা করেছেন।
তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, সেখানে মোট খাসজমির পরিমাণ ১৩ একর ৭০ শতক। যার মধ্যে সিরাজুল ইসলাম ভোগদখল করছেন তিন একর জমি। বাকি জমিগুলোর ওপরে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। সিরাজুল ইসলাম সরকারের কাজে যে বাধা দিচ্ছে যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চিরিরবন্দর মৌজার ‘ক’ তপসিলভুক্ত জেএল নং-৬১, দাগ-৪০২৪/৫৮৫৮, খতিয়ান নং ১-এ নির্মাণ করা হচ্ছে মুজিববর্ষের উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্প ৩-এর অধীনে ৫০টি ঘর।
এদিকে সিরাজুল ইসলাম সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আব্দুলপুর ইউনিয়নের তহশিলদার নির্মল কুমার রায় বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। সেই মামলায় পুলিশ সিরাজুলের ছেলে সেলিম সরকারকে গ্রেপ্তার করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৬৬ সালে প্রথম শ্রেণির কবলা দলিল মূলে তিন একর জমি কেনেন আমার বাবা মরহুম মকসেদ আলী সরকার। সেই হিসেবেই আমরা ওই জমি ভোগদখল করে আসছি। কিন্তু প্রশাসন আমাদের না জানিয়েই ওই জমিতে ঘর নির্মাণ করছে। এতে আমরা আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছি। আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
মামলার বাদী নির্মল কুমার রায় বলেন, ‘ধাশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ যেখানে করা হচ্ছে সেই জমি সম্পূর্ণ সরকারের। কিন্তু কতিপয় কিছু লোক সেই জমি তাদের বলে দাবি করছেন। যাদের নামে বন্দোবস্ত আছে তাদের জমিতে কোনোকিছু করা হচ্ছে না। কিন্তু তার পরও আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণকাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’
চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘রেলব্রিজ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো একেবারে বসবাসের আর অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সেই বাড়িগুলোর সামনেই আশ্রয়ণ প্রকল্প ৩-এর অধীনে ৫০টি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ওই জমিতে কাজ করতে বাধা দিচ্ছেন।’
‘তিনি ১৯৬৬ সালে ৩ একর জমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন। আমরা সেই জমিতে কাজ করছি না। কিন্তু ওই ব্যক্তি তিন একর ছাড়াও অতিরিক্ত জমি দখল করে আছেন। আবার উনি বন্দোবস্ত গ্রহণ করে অনেক জমিই স্ট্যাম্পের মাধ্যমে হাতবদল করেছেন’, যোগ করেন তিনি।
মন্তব্য