-->
শিরোনাম
হুমকিতে বিমানবন্দর, সেনানিবাস, রেল কারখানা

শহররক্ষা বাঁধের নড়বড়ে অবস্থা

নীলফামারী প্রতিনিধি
শহররক্ষা বাঁধের নড়বড়ে অবস্থা
নীলফামারীর শহররক্ষা বাঁধটি ১৫ কিলোমিটার জুড়ে নড়বড়ে অবস্থা

নীলফামারীর সৈয়দপুরে খড়খড়িয়া নদীর শহররক্ষা বাঁধটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। প্রায় ৬০ বছর পুরোনো বাঁধটির ১৫ কিলোমিটার জুড়ে কমপক্ষে ২০০ স্থানে ছোট-বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে শহরবাসী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধের ওপর দিয়ে বালুবাহী ট্রাক ও বাঁধের পাশের মাটি দুর্বৃত্তরা কেটে নেয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পানির স্রোতে ওই বাঁধের কোথাও ভাঙন দেখা দিলে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটতে পারে।

সৈয়দপুরের বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের চান্দিয়ার ব্রিজ থেকে শুরু করে পৌর এলাকার ১০নং ওয়ার্ডের পশ্চিম পাটোয়ারীপাড়া হয়ে বেলাইচন্ডী ইউনিয়নের শেষসীমা পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধটির বেহাল অবস্থা চোখে পড়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫ কিলোমিটার লম্বা এই বাঁধের কারণে সৈয়দপুর শহরের সরকারি ও বেসরকারি ৫০০ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বন্যার পানি থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু বাঁধ ভেঙে গেলে ওইসব স্থাপনা পুরোপুরি হুমকির মুখে পড়বে।

বিশেষ করে সৈয়দপুর বিমানবন্দর, ব্রিগেড সেনানিবাস, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা, ১৫০ মেগাওয়াট গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বাংলাদেশ আর্মি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সৈয়দপুর (বাউস্ট), সৈয়দপুর সরকারি কলেজ, বিসিক শিল্পনগরী, সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, সৈয়দপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং মিলিটারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ (ইএমই) ছোট মাঝারি শিল্প কারখানা ভয়াবহ প্লাবন জোনে অবস্থান করছে।

বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার পানি ঢুকলে ওই স্থাপনাগুলো কমপক্ষে ৩-৫ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

খড়খড়িয়া নদীটি অনেক বেশি আঁকাবাঁকা ও প্রস্থে অনেক ছোট। অন্যান্য সময় স্রোতের মাত্রা কম থাকলেও বর্ষাকালে তীব্র স্রোত থাকে। আঁকাবাঁকা থাকার কারণে পানির স্রোত সরাসরি তীব্র বেগে আঘাত হানে শহররক্ষা বাঁধে। এতে করে বাঁধের ক্ষমতা কমে গেছে। এ জন্য নদীটি সোজাকরণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাসিন্দা মফিজুল, হাফিজুল, জিয়াউল হাসান বাবু, বোরহান, শাকিল, আজিজুল, হাবিবুর ও তৈয়ব জানান, খড়খড়িয়া নদীর শহররক্ষা বাঁধটি টেকসই করতে হলে নদী সোজাকরণ যুগের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এ জন্য প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে হলেও নদী সোজা করা উচিত। নদীটি সোজা করে শহররক্ষা বাঁধটি কংক্রিট দিয়ে বাঁধাই করা হলে অন্ততপক্ষে শত বছর এ জনপদের মানুষ বর্ষাকালে নিশ্চিন্ত ঘুমাতে পারবে।

শহররক্ষা বাঁধের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সৈয়দপুর বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবু সৈয়দ মো. আমিনুর রশিদ বলেন, ‘প্রতি বর্ষাকালে বন্যার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার আগেই খড়খড়িয়া নদীর পানি বাঁধ উপচে শহরে প্রবেশ করে। সে সময় জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ দিয়ে পানি আটকিয়ে সরকারি- বেসরকারি স্থাপনা রক্ষা করা হয়। আঁকাবাঁকা এ নদীটির গভীরতা ও চওড়া কম। এতে করে পানি প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি হয়।

‘একই সঙ্গে স্রোতের গতি তীব্র হওয়ায় বাঁধে আঘাত লেগে পানি উপচে শহরে প্রবেশ করার সম্ভাবনা থাকে। উজানের পাহাড়ি ঢলের ফলে প্রতি বছর ৪-৫ বার বিপদসীমা অতিক্রম করে বন্যার পানি। পাকা ব্লক দিয়ে বাঁধটি নির্মাণ করা হলে অন্ততপক্ষে ১০০ বছরে বাঁধের কোনো ক্ষতি হবে না। এর ফলে সরকার ও সাধারণ মানুষ নির্ভর সময় কাটাতে পারবে।’

পাউবোর সৈয়দপুর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান বলেন, ওই ‘বাঁধটি টেকসই করার জন্য আমরা ডিপিপির প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছি। সঠিক সময়ে তা বাস্তবায়ন হবে।’

মন্তব্য

Beta version