পাহাড়ি ঢলে আবারও কিশোরগঞ্জের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। দুই-একদিনের মধ্যে সেই পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ অবস্থায় ফসলডুবির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই দ্রুত ধান কাটার অনুরোধ জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করছে উপজেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, উজানের ঢলে দ্রুতই বাড়ছে কিশোরগঞ্জের হাওরের পানি। ভারতের মেঘালয় ও দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গত দুই দিন ধরে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় বাড়ছে পাহাড়ি ঢল। বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে মেঘনা, ধনু, কালি ও কুশিয়ার নদীর পানি। জেলার ইটনাতে হুমকির মুখে পড়েছে জিওলের বাঁধ। এই বাঁধের পাশে আরো একটি বাঁধ রয়েছে।
এদিকে গত দুই সাপ্তাহ আগে উজানের ঢলে তলিয়ে যায় কিশোরগঞ্জের প্রায় ৮০০ হেক্টর জমির ধান। দ্বিতীয় দফায় জমির ধান তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় কাঁচা-পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছে হাওরের কৃষকরা।
কৃষকরা বলছে, এই সময়ে বাঁধগুলো রক্ষা করা না গেলে পুরো হাওরের বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর অঞ্চলেই ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব ধান কেটে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হলো। কোথাও কোনো স্থানে যদি ফসল রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দেয়, অথবা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, যত দ্রুত সম্ভব স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো।
ইটনা হাওরের কৃষক আমিন মিয়া বলেন, ‘পানি আবার বাড়তেছে, তাই কাঁচা-পাকা ধান কেটে আনতেছি। কারণ আবার যদি পানি বাড়ে, তাইলে আমার সব শেষ হয়ে যাবে।’
আরেক কৃষক সরাফত আলী বলেন, ‘পানি বাড়ার শঙ্কা আবার দেখা দিয়েছে। তাই প্রশাসনের লোকজন এলাকায় মাইকিং করতেছে। এ কারণে আমিও কাঁচা-পাকা ধান কেটে ফেলতেছি। ঋণ নিয়ে ধান চাষ করেছি, সেই ঋণ এখন কীভাবে শোধ করব?’
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের নদীগুলোর পানি এখনও বিপৎসীমা থেকে ৪২ সেন্টিমিটার নিচে আছে। কিন্তু প্রতিদিনই যেভাবে পানি বাড়ছে, এভাবে যদি দুই-একদিন পানি বাড়ে, তাহলে তা বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।’
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সাংসদ রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকও নিজের ফেসবুক আইডি থেকে স্ট্যাটাস দিয়ে হাওরবাসীকে দ্রুত ধান কাটার অনুরোধ জানিয়েছেন।
মন্তব্য