-->
শিরোনাম

জলকেলি দিয়ে শেষ পাহাড়ের বৈসাবির উৎসব

অরণ্য জুয়েল, রাঙামাটি
জলকেলি দিয়ে শেষ পাহাড়ের বৈসাবির উৎসব

রাঙামাটিতে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই জল উৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি (বৈসু-সাংগ্রাই-বিজু-বিষু-বিহু)। তিন পার্বত্য জেলার মারমা জনগোষ্ঠী কেন্দ্রীয়ভাবে রাঙামাটিতে সবচেয়ে বড় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মূলত চৈত্রসংক্রান্তিতে বাংলাবষের্র বিদায় ও বরণ উপলক্ষে এ উৎসব উদযাপন করে পাহাড়িরা। এর মধ্য দিয়ে ১৫ দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটলো।

শনিবার রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দিনব্যাপী সাংগ্রাই জল উৎসবের আয়োজন করে মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস)। দুপুরে জল উৎসবের উদ্বোধন করেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জেলা আওয়ামীগ সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি।

নববর্ষকে বরণ ও পুরনো বছরকে বিদায় জানাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মারমা সম্প্রায় সাংগ্রাই জল উৎসব উদযাপন করে থাকে। মারমা তরুণ-তরুণীরা দলবেঁধে একে অপরের গায়ে জল ছিটিয়ে ভিজিয়ে দেয়।

তাদের বিশ্বাস, এ জল ছিটিয়ে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে পুরনো বছরের দুঃখ, গ্লানি, হতাশা, অমঙ্গল মুছে গিয়ে নতুন বছরে সুখ শান্তি কল্যাণ বয়ে আনে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে গত দুই বছর পাহাড়ের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব বৈসাবি পালন করতে পারেননি পাহাড়ের মানুষ। তাই দীর্ঘদিন পর আয়োজিত অনুষ্ঠানে মানুষের আগ্রহ ছিল বেশি। উৎসবে যোগ দিতে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে। ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি এ উৎসব পরিণত হয়েছে সম্প্রীতির মিলন মেলায়। উৎসবে মারমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীদের ঐতিহ্যবাহী জলকেলি ছাড়াও পরিবেশিত হয় আবহমান বাংলার নৃত্যসঙ্গীতসহ বৈচিত্র্যপূর্ণ পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলোর নান্দনিক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মাতে পাহাড়ি বাঙালি জনগোষ্ঠীর মানুষেরাও।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটি ৩০৫ পদাতিক ব্রিগেড ও রিজিয়ন কমান্ডার ব্রি. জে. ইমতাজ উদ্দিন এনডিসি, পিএসসি, রাঙামাটি ডিজিএফআই কর্নেল জিএস কর্ণেল খন্দকার তারিকুল ইসলাম, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, রাঙামাটি জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম, রাঙামাটি পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মারমা সংস্কৃতি সংস্থার (মাসস) সভাপতি অংসুইপ্রু চৌধুরী।

অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছর আমরা জল উৎসব করতে পারিনি। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা সহনশীল হওয়ায় এ বছর করছি। আমাদের প্রত্যাশা হলো, আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকশিত হোক। সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা যাতে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালে সেই উন্নয়নের পথে যেতে পারি, সেই লক্ষ্যে আমরা অনুষ্ঠানটি করছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘সবার কাছে আমরা প্রত্যাশা করছি, সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্প্রীতি পার্বত্য চট্টগ্রামে অটুট থাকুক। এবং এই সম্প্রীতির মাধ্যমে এখানকার যে হানাহানি, মারামারি, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি হচ্ছে সেগুলো বন্ধ হোক।’

মন্তব্য

Beta version